চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
রোববার (২৭ জুন) দুপুরে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে মেয়র হিসেবে নিজের প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ হাজার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন মেয়র। বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল।
মেয়র বলেন, প্রাচ্যের রানি নামে খ্যাত বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম সাগর, পাহাড়, নদী ও সমতলভূমি পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। একদিকে বঙ্গোপসাগরের বিশালতা, অন্যদিকে পাহাড়ের অনিন্দ্যসৌন্দর্য ও মৌনতা। কর্ণফুলী ও হালদার নির্মল মিতালিতে প্রকৃতি যেন চট্টগ্রামকে সাজিয়ে দিয়েছে অপরূপ সাজে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে চট্টগ্রামের রয়েছে সুপ্রাচীন গর্বিত ইতিহাস। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে অবস্থিত হওয়ায় এশিয়া তথা প্রাচ্যের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রামের রয়েছে অসামান্য অবদান। এ-দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ জোগান দেয় চট্টগ্রাম। তাইতো বলা হয়- চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই সমগ্র দেশের উন্নয়ন। বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে-কয়টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
মেয়র বলেন, ১৯৮৮ সালে সরকার অনুমোদিত চসিকের ৩ হাজার ১৮০টি পদের জনবল কাঠামো রয়েছে। ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত একটি জনবল কাঠামো থাকলেও তার বিপরীতে কোনো নিয়োগবিধি না থাকায় নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রায় ৩১ বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চসিক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা ২০১৯ সালের ১১ জুলাই এসআরও (নম্বর-২৪৩-আইন/২০১৯) মূলে গেজেটভুক্ত। সম্প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৬টি পদ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। চসিকের কর্মপরিধি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় ৯ হাজার ৬০৪ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে পৌরকর ও ট্রেড লাইসেন্স শতভাগ অনলাইনে আদায়/প্রদান করা সম্ভব হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, যান্ত্রিক শাখার সব কার্যক্রম সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনার লক্ষ্যে ট্রান্সপোর্ট পুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান গাড়িগুলোর সব তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রণীত স্টোর ম্যানেজমেন্ট ও ফুয়েল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে এ সফটওয়্যারের ইন্টিগ্রেশন করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চসিকের হোল্ডিং মালিক ও ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি, ভূমি হস্তান্তর কর, রিকশা লাইসেন্স ফি, বিজ্ঞাপন কর, মার্কেটের দোকানভাড়া ইত্যাদি চলতি আর্থিক সালের মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ সময় প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররাউপস্থিত ছিলেন।