শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আমাকে পছন্দ করে না। কারণ আমি বিভিন্ন সময় প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। অনেক ক্লিপ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার চেষ্টা করে। তারা সংখ্যায় কম। দেশে সাধারণ মূল্যবোধের মানুষ সংখ্যায় অনেক বেশি। তবে প্রতিক্রিয়াশীলরা সংগঠিত।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশ ঠেকাতে অতিরক্ষণশীল মতবাদ তারা প্রচার করছে। এদের প্রচারণায় আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রভাবিত হয়ে যায়। সম্প্রতি দুয়েকজন ক্রিকেটারও এমন প্রচার করেছে, নারীদের কাজে যোগদান বিষয়ে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে দিনব্যাপী সম্প্রীতির উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে নরওয়ে দূতাবাস এবং আইসিটি বিভাগের সহায়তায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ‘পার্টনারশিপ ফর এ মোর টলারেন্ট, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ (পিটিআইবি)’ প্রকল্পের ‘ডাইভার্সিটি ফর পিস’ এটুআই- এসপায়ার টু ইনোভেট, ইউনেস্কো, একশনএইড বাংলাদেশ, ইন্সটিটিউট ফর ইনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), দি এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) যৌথ আয়োজনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫ এর পরে সেই শক্তি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। উদার পশ্চিমের (লিবারেল ওয়েস্টের) অনেক দূতাবাসের কর্তারাও অনেক সময় এ ধারণার প্রচারকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে। যেহেতু গণতন্ত্র বিষয়ে তাদের একটা অবস্থান আছে। তা তারা করতে পারে। তবে আমাদের সহনশীল সমাজকে যারা অস্থির করতে চায়, তাদের নিয়ন্ত্রণে আমরা নিজস্ব উপায়ে সচেষ্ট আছি। থার্ড জেন্ডারের বিষয়টি যখন পাঠ্যপুস্তকে আসল তাদের প্রতিক্রিয়া আপনারা দেখেছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করতে হয়।
তিনি বলেন, কূপমণ্ডূকতায় ভরা পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজের বীজ রোপণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এক বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠা হতে দেয়নি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। সহনশীলতা ও মুক্ত চিন্তার জন্য এ উপমহাদেশ বহু আগে থেকেই বিখ্যাত। আমাদের যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বহু শতকের ঐতিহ্য তা ধ্বংস করা হয়েছে ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে। তারা আমাদের মূল্যবোধের ওপর অন্য মূল্যবোধ চাপিয়ে দিয়ে চেয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ছিল সম্প্রীতি রক্ষা ও বৈচিত্র্য রক্ষার এক সংগ্রাম। আমাদের সরকার সবসময় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করেছেন। আমরা পার্বত্য অঞ্চলের ভাইদের সঙ্গে বহু যুগ ধরে সহাবস্থান করছি। মুক্তিযুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে যুদ্ধ করেছি৷ হ্যাঁ, চুক্তি হয়ত এখনো শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও আছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, সহনশীলতা ও ভিন্নতাকে গ্রহণের মানসিকতা অবশ্যই আমাদের তরুণদের থাকতে হবে৷ কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এটাই। আমরা বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এ স্লোগান আমরা ব্যবহার করি। সেখানেও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আক্রমণ করে। ট্রল করে। পার্বত্যবাসীর প্রতি দীর্ঘদিন যে অবিচার হয়েছিল, সে অন্যায়কারী গোষ্ঠী এখনো বেশ সক্রিয়। সামরিক শাসকরা সমতল থেকে বাঙালিদের জোর করে ধরে নিয়ে সেখানকার জনমিতি বদলে দিতে চেয়েছিল। তারা শান্তি চুক্তির দিনও এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়েছিল। এরকম জটিল মাত্রা ও সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ করতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের গত ১৪-১৫ বছরের অর্জনকেও বিবেচনা করতে হবে এই প্রেক্ষাপটে যে, সমাজে অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিহত করেই আমাদের এগুতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চলছে। সচেতন থাকতে হবে। বৈচিত্র্যকে গ্রহণে সামাজিক মানসিকতা বদলে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা দেখুন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা এখন সামাজিক স্বীকৃতি পায়। একসময় তাদের অন্তরালে রাখা হত।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতায় যেন কোনো হুমকি না আসে সে বিষয়ে আমরা সচেতন। বাংলা হবে আফগান এ স্লোগান যারা দিয়েছিল তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। সেটা না করলে দেশ আফগানিস্তান-পাকিস্তানের পথে এগিয়ে যাবে। যেসব দল ও সামাজিক শক্তি সহনশীলতা ও সম্প্রীতির সঙ্গে আছেন তাদের নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করব। পশ্চিমা কূটনৈতিকদের বলি, দেশে বৈশ্বিক মানদণ্ডে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অবশ্যই আমরা ধরে রাখব। গণতন্ত্র রক্ষার নামে সরকার ও দলকে যখন আক্রমণ করা হয়, তা দুঃখজনক।
বিশেষ অতিথি নরওয়ের রাষ্ট্রদূত স্পেন রিকটার এসভেনডসেন বলেন, অসাধারণ এক ধারণা সম্প্রীতির উৎসব। সম্প্রীতি ও সহনশীলতা এত সহজ নয়। ভিন্নতাকে মেনে নেওয়া হলো সহনশীলতা, এটা কঠিন। অনুশীলনের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয়। ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য সম্প্রীতি প্রয়োজন। শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সম্প্রীতি প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ইউনেস্কোর অফিসার ইন-চার্জ সুসান ভাইজ বক্তব্য রাখেন।