জামালখান এলাকার বর্ষা আর ইপিজেড এর আয়াতের মতোই শেষ পরিণতি হলো শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আখি মনির (১১)। বিড়ালছানার লোভ দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে তরকারি বিক্রেতা রুবেল শিশু আবিদাকে ধর্ষণের পর বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক রুবেল। বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন। রুবেল মহানগরীর পাহাড়তলী থানার কাজিরদিঘী ডা. নজির বাড়ির মৃত আব্দুল নূরের ছেলে। পেশায় তিনি সবজি বিক্রেতা।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রুবেলকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার দুপুরে তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার আয়নী ওই এলাকার আবুল কাশেমের মেয়ে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর মা-বাবা দুজনেই পোশাক কারখানার কর্মী। মা চট্টগ্রামে এবং বাবা ঢাকা চাকরি করেন। মা কর্মস্থলে থাকার সময় অয়নী তার দাদার সঙ্গে বাসায় থাকতো। কয়েকদিন আগে অয়নীকে তার এক বান্ধবী ফোন দিয়ে বিড়ালছানা কিনেছে জানিয়ে তাকেও একটি কিনে দেওয়ার কথা বলে। অয়নীর মা ফাতেমা বেতন পেলে মেয়েকে বিড়ালছানা কিনে দেওয়ার কথা বলেন।
গত ২১ মার্চ অয়নী স্কুলে গেলেও আর ফিরে আসেনি। তার মা খবর পেয়ে কর্মস্থল থেকে এসে মেয়েকে অনেক জায়গায় খুঁজেও সন্ধান পাননি। পরে এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে আসামি রুবেল ভিকটিমকে বিড়ালছানা দেওয়ার নাম করে তার বাসায় নিয়ে যান। এক ফুটেজে দেখা যায় আসামি ভিকটিমকে একটি বিড়ালছানা হাতে তুলে দিচ্ছেন। এরপর থেকে ওই শিশুর হদিস পাওয়া যায়নি।
আদালতের আদেশের পর বাদীর আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, গত ২১ মার্চ পাহাড়তলী থানার কাজীরদীঘি এলাকায় আয়নী নামের শিশুটিকে বিড়ালছানা কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অপহরণ করে রুবেল নামের এক যুবক। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, আসামি ভিকটিমকে বিড়ালছানা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভিকটিমের পরিবার থানায় জিডি করে। এরপর সন্দেহভাজক অপহরণকারীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েও ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন পর ভিকটিমের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। যে কারণে মঙ্গলবার আমরা নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-২ ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছি। আদালত আমাদের অভিযোগ শুনে পাহাড়তলী থানাকে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরমধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে সন্দেহভাজন রুবেলকে আটক করে পিবিআই।
‘জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করার কথা জানায়। পরে মরদেহ বস্তাভর্তি করে ডোবায় ফেলে দেয় বলে পিবিআইকে জানায়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানাধীন মুরগির খামার এলাকার একটি ডোবা থেকে আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত রুবেলকে গ্রেফতার করে পিবিআই’ বলেও জানান আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘গ্রেফতার রুবেল ধর্ষণের পরে শিশু আয়নীকে গলাটিপে হত্যা করে। পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করে ডোবাতে ফেলে দেয়। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’