সিআরবি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা

দীর্ঘ ৪৮৩ দিনের আন্দোলন শেষে সিআরবি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিআরবিকে বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের নেতারা। তারা বলছেন, এখানে আর হাসপাতাল প্রকল্প হচ্ছে না। সিআরবি প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগত সম্পদ হিসেবে থাকবে।

শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামবাসী ৪৮৩ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের যত সংসদ সদস্য আমরা একটা দরখাস্ত লিখলাম, রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। সব এমপি, মন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার সেই দরখাস্তে সই করেছেন।

‘ওই দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর কাছে গেলাম। সঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও নওফেলও ছিল। সেটা আমরা হস্তান্তর করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণের নেত্রী। মানুষের যে দাবি এখানে হাসপাতাল না করার জন্য, যখন সব মন্ত্রী-এমপি একমত। প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কথা দিয়েছেন এখানে হাসপাতাল হবে না।’

তিনি বলেন, সারাদেশসহ পৃথিবীতে যারা চট্টগ্রামের লোক আছেন, তারা কোনোদিন এখানে হাসপাতাল চান না। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন। প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড থেকে জনসভা শুরু করবেন। লোকে লোকারণ্য করবো। যেন পলোগ্রাউন্ড উপচে যেন পড়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইবো। তখন তিনি নিজে ঘোষণা দেবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, সার্কিট হাউজের সামনে শিশু পার্ক সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে। আউটার স্টেডিয়াম নষ্ট করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে স্টেডিয়ামের নিচে মার্কেট থাকে না। মার্কেট করার তো জায়গা আছে। যখন মন্ত্রী ছিলাম জাম্বুরি পার্ক করেছি। জাতিসংঘ পার্ক করতে পারিনি। এখনো এমপি আছি। সংসদীয় কমিটিতে আছি। জাতিসংঘ পার্কও করবো। রমনা পার্কের চেহারা পাল্টে দিয়েছি। ডিসি হিল পুরা করতে পারিনি। মনে করি ডিসিকে পাহাড়ের ওপর থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, ডিসিরা যখন বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যায় তখন সাধারণ বাসায় থাকে। এই ডিসি হিলকে সম্পূর্ণভাবে পার্ক করতে চাই। তাদের জন্য অনেক বাংলো আছে, একটা দিয়ে দিলাম। এত বড় পাহাড় দরকার আছে? সেখানে পার্ক করতে পারি, হাঁটতে পারি। ডিসি এবং কমিশনার অন্য জায়গায় রাখতে পারি। ডিসি হিলে পার্ক করতে পারি। সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দেবো না। বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করবো।

মোশাররফ বলেন, আরেকটা সমস্যা জিয়া জাদুঘর সরাতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এটা চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর হবে। জিয়া কোনো যুদ্ধ করেননি। আমি সাক্ষী। তার নামে জাদুঘর হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর হবে। শিশু পার্ক এটা তুলে দিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে আউটার স্টেডিয়ামটা নষ্ট করে দিয়েছে। অবশ্যই এখানে কোনো হাসপাতাল হবে না। চট্টগ্রামের একটা লোক বেঁচে থাকতে এখানে হাসপাতাল হবে না। চেষ্টা করবো ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এটা শোনার জন্য।

বিশেষ অতিথি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ মোবাইলফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই আছেন। আমরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো জানানোর পর তিনি বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে কিছু হবে না। কেউ কেউ ভুলবশত পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রকল্প নিয়ে ফেলে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক।

বিশেষ অতিথি সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আপনাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে এখান থেকে হাসপাতাল সরে গেছে। হাসপাতাল হবে না। মেয়র হিসেবে প্রস্তাবনা মালিকানা রেলের থাক। সিটি করপোরেশনেক দায়িত্ব দেওয়া হলে আমাদের অর্থায়নে এখানে বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান নান্দনিকভাবে করে দেবো।

বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতারা এ স্থানের পরিবর্তে প্রকল্প অন্য স্থানে করার যে দাবি তা সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রেলওয়ে যে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের অংশ হিসেবে তারা জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সরকার। গায়ের জোরে রেলওয়ে কিছু করেননি।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. অনুপম সেন বলেন, যখন জানতে পারলাম এখানে পিপিপিতে হাসপাতাল হচ্ছে তখন সবাই মিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে আমৃত্যু আন্দোলন করবো। প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বে পরিবেশবিষয়ক শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। হাসপাতাল অনেক জায়গায় হতে পারে। সিআরবির মতো সুন্দর জায়গা খুব কম আছে। শত প্রজাতির গাছ আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোজাসুজি আবেদন প্রেরণ করলাম। সেদিনই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে এখানে আর কোনোদিন হাসপাতাল হবে না।

তিনি বলেন, যিনি বিশ্বজুড়ে পরিবেশের জন্য আন্দোলন করছেন তিনি এ পরিবেশ নষ্ট হতে দেবেন না। তার নির্দেশেই সংসদীয় কমিটি হাসপাতালের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সিআরবিতে বঙ্গমাতার নামে উদ্যান করা হোক। আজ এখান থেকে সিআরবিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব উদ্যান ঘোষণা করছি।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাবুল, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযু্দ্ধের বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব মো ইউনুস, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

CRBজাতীয় উদ্যানপ্রধানমন্ত্রীসিআরবি রক্ষা