অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের অনুপ্রেরণায় তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। তার সম্পাদনায় দৈনিক আজাদী দেশের সংবাদপত্র জগতে অনন্য অবস্থানে পৌঁছে। তবে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি এই মানুষটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতিতেও যুক্ত হয়ে যান। চট্টগ্রামের যে কয়জন মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা ছিল অধ্যাপক মো. খালেদ ছিলেন তাদের একজন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে রাউজান আসনে মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ফজলুল কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করেন। অধ্যাপক মো. খালেদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মারক বক্তৃতা -২০২২ অনুষ্ঠানে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এ উপলক্ষে আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা ছিলেন অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ।
প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি রাশেদ রউফ এবং অধ্যাপক খালেদের ছেলে মোহাম্মদ জহির।
প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, অধ্যাপক খালেদ ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। নিজের মধ্যে সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ নানা গুণের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন তিনি। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও উদ্যোগে তিনি ছিলেন নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে তাঁর দৃপ্ত পদচারণা সমাজকে বারবার সঠিক পথের দিশা দিয়েছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মধ্যে এতগুলো গুণের সম্মিলন থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন বিনয়ী একজন মানুষ। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে একেবারে কাছের হয়ে মিশে যেতেন। তাই সাধারণ মানুষও তাঁকে নিতান্ত কাছের মনে করতেন। তিনি একেবারে সাদামাটা জীবনাচরণ মেনে চলতেন। তিনি রুচিবোধে ছিলেন চিরায়ত বাঙালি। সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা ছিল তার নিত্য পরিচিত পরিচ্ছদ।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ একজন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিবিদ ছাড়াও তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল নিয়ে তিনি মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। ‘বাংলার বাণী’তে যোগদানের পর তাঁর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে আমি আজাদীতে যেতাম। তিনি আমাকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন খেলা কাভার করার জন্য ঢাকায় পাঠাতেন। তিনি অত্যন্ত উদার মানুষ ছিলেন।
দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, বহু গুণে গুণান্বিত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন একজন নিরহংকারী বিনয়ী মানুষ। উনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বর্তমান নেতাদের মতো কোনো প্রটোকল লাগত না। আমি উনার নিকটাত্মীয় হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছি।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ প্রজন্মের বাতিঘর। সততা, নিষ্ঠা ও নীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন।
কবি রাশেদ রউফ বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে আমরা সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ হিসেবে শ্রদ্ধা করি। বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে একজন নেতৃত্বদানকারী মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ছেলে মো. জহির বলেন, আমার বাবা ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত হয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বর্তমান সরকার আমার বাবাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে আমি বাবার পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলাম।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, সহসভাপতি স ম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির হায়দার, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, কার্যকরী সদস্য দেবদুলাল ভৌমিক, মনজুর কাদের মনজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।