সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে থাকতে পারছেনা দখলদার কেউ। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যখ্যাত জঙ্গল ছলিমপুর ও আলীনগরে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে অবৈধ দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী এক মাসের মধ্যে এই লক্ষ্যে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। জঙ্গল সলিমপুরের ৩ হাজার ১শ’ একর খাস জায়গা উদ্ধার এবং সেখানের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় আরও নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বৈঠকে আগামী এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে ডিআইজি চট্টগ্রামের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের পাশাপাশি পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তহবিল হতে দ্রুততম সময়ে ছলিমপুর এলাকায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি অফিস নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্যবস্থাপনায় একটি ব্যারাক স্থাপন করতে হবে। স্থানীয় সরকার, সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও ইসিবি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি নিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
অন্যদিকে আলীননগর ও জঙ্গল ছলিমপুর এলাকা নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে আগামী এক মাসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সভায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত গুলো হচ্ছে- ১) জঙ্গল ছলিমপুরে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা ৩১০০ একর জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং জমি উদ্ধারের পর সেখানে জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন। ২) গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি সমূহ ১ মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন এবং উদ্ধারকৃত সরকারি খাস জমিতে জীব-বৈচিত্র রক্ষাপূর্বক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করবে। ৩) জঙ্গল ছলিমপুরে যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে স্ব স্ব উপজেলায় স্থায়ী ঠিকানায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ৪) জঙ্গল ছলিমপুরে সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা ও মাদকের রাজত্ব কায়েম করে রাখা সন্ত্রাসী-আসামীদের গ্রেফতারে অবিলম্বে সাঁড়াশি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং ৫) আগামী ১ মাসের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ, জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সুরাহা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, সিনিয়র সচিব ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রতিনিধিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জঙ্গল ছলিমপুর ঘিরে নানা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা করে সরকার। সেখানে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে নাইট সাফারি পার্ক, স্পোর্টস ভিলেজসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে অবৈধ বাসিন্দাদের ওপর ভর করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসা সন্ত্রাসীরা। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে মামলার আসামিও হতে হয়ে জেলেও যেতে হয়েছে তাদের।