জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে খালে থাকা সব বাঁধ ৩০ জুনের মধ্যে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুন) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জলবদ্ধতা নিরসনে সব সেবা সংস্থার সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে।
চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কর্মকর্তা এসএম মোস্তাইন হোসেন, সিডিএ জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর প্রমুখ।
মেয়র বলেন, নগরে চলমান জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে আশা করা যায়। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। সিডিএ তা সরাচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতা যাতে এবারের বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ না বাড়ায় তা নিয়ে সব সংস্থার সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন। মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করতে হবে সব সংস্থাকে। না হয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেওয়া মেগা প্রকল্পের টাকার অপচয় হবে, যা কাম্য নয়।
মেয়র জলবদ্ধতার জন্য কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং না হওয়া, নদী খালে পলিথিন ফেলাকে দায়ী করেন। তিনি পলিথিন উৎপাদন বন্ধে চসিকের উদ্যোগে অভিযান শুরুরও ঘোষণা দেন। মেয়র আরএস এবং সিএস শিট অনুযায়ী নতুন খাল খননের পাশাপাশি বিলীন এবং দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়ার পক্ষে মত দেন।
তিনি চলমান মেগা প্রকল্পের কর্মকর্তাদের স্থানীয় কাউন্সিলরদের মতামত ও তাদের সঙ্গে কাজ পরিচালনা করতে বলেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা সব সেবা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। একে অপরকে দোষারোপ করলে কাজ হবে না। খালে কাজের জন্য যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তা চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে অপসারণ হবে।
সেনাবাহিনীকে তিনি এ ব্যাপারে বলে দেবেন বলে জানান।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ২০১৬ সালের মাস্টারপ্ল্যানের পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে করপোরেশনের মতামত না নেওয়া হলে এখনই তা নেওয়ার আহ্বান জানান। না হয় জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
মেজর পঙ্কজ মল্লিক বলেন, বার বার সব সংবাদ মাধ্যমে মেগা প্রকল্প বলা হলেও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে সিডিএ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার। এর মধ্যে আমরা পেয়েছি ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ৩৬টি খালের মধ্যে আমরা অর্ধেক খালের কাজ করেছি। বাকি অর্ধেক খালের কাজ এখনো বাকি। ড্রেনের কাজ করেছি মাত্র ২৬ কিলোমিটার। কাজেই এখনি বেশি কিছু আশা করলে ভুল হবে।
চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ২০১৬ এর ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়নি বলেই নগরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি সচিত্র প্রতিবেদনে করপোরেশনের করা জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্পন্ন হওয়া ড্রেনের কাজ ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এতে করপোরেশন ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার কাজ করেছে বলে জানা যায়।
তিনি নগরে ১৩ খালের সাথে সমুদ্রের সংযোগ ও ১০টি খালের সাথে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে বলে জানান। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খাল খননের পাশাপাশি খালের দুই পাড়ে ২০ ফুটের রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। যাতে খাল খননের পর খালের মাটি সহজে অপসারণ করা যায়। তিনি নগরে নতুন সড়ক সৃষ্টির প্রস্তাবও করেন।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জলাবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণাধীন জলকপাটের (স্লুইসগেট) রক্ষণাবেক্ষণে চসিককে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শও নেওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় নির্বিঘ্নে খাল খননে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জমি অধিগ্রহণে সব সেবা সংস্থা একমত পোষণ করেন।