স্প্রে-মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলে তার কার্যকারিতা বেশি ফলপ্রসূ হবে। ফগার মেশিনে ছিটানো ওষুধের ভিন্নতা আনলে এর কার্যকারিতা পূর্ণমাত্রায় পাওয়া যাবে। আবার প্রাকৃতিক ভাবেও মশা প্রজনন প্রতিরোধ সম্ভব। পুদিনা পাতা, লেবু পাতা, তুলসী পাতা, নিমপাতা, তেজপাতার ঘ্রাণ মশা প্রজনন প্রতিরোধ করে। সিটি কর্পোরেশনের যে সকল সড়কে আইল্যান্ড আছে সেখানে এ ধরণের উদ্ভিদের চারা রোপন করা হলে মশা নিধন অনেকটা সহজ হবে।
মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কীটনাশকের কার্যকারিতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)’র গবেষক দল এসব সুপারিশ করে। আজ মঙ্গলবার সকালে টাইগারপাসস্থ কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নিকট গবেষক দল এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। চবির কীটতত্ত্ব বিভাগ এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরিন আখতারসহ গবেষক দলের সকল সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণা টিমের আহবায়ক অধ্যাপক রবিউল হাসান প্রতিবেদনটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, প্রতিবেদন তৈরিতে বিশেষজ্ঞ টিম ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে ৫৭ টি স্পট থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত এসব লার্ভার মধ্যে ১৫টি স্পটের লার্ভার শতভাগই ছিলো এডিস মশার, এনোপলিস ছিলো ৩৯টিতে।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে মেয়র গবেষক দলকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিরুপন ও প্রয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা নির্ধারণে চবির এ গবেষণা প্রতিবেদন নতুন ইতিবাচক মাত্রা যুক্ত করেছে। এর ভিত্তিতে আগামীকাল ৪ আগস্ট থেকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২৫ জন স্প্রেম্যান ওষুধ ছিটাবেন। ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিদিন ৪টি করে ৪১টি ওয়ার্ডে ১০ দিন মশার ওষুধ ছিটানোর পর পুনরায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে একমাসে তিনবার ওষুধ ছিটানো হবে। তিনি বলেন, এর বাইরে নিয়মিত কার্যক্রমও চলবে। এভাবে মাসব্যাপী এ কার্যক্রমে ১০০ জন জনবল সম্পৃক্ত থাকবে। একই সাথে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক প্রচার কার্যক্রমও চলবে। এ কার্যক্রমের সাথে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১ হাজার ৫ শত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গবেষণা কার্যের জন্য চবি উপাচার্যসহ প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মেয়র বলেন, মশক নিধনে এ ধরণের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই প্রথম বারের মত পেয়ে দেশকে মশক নিধনে দিক নির্দেশনামূলক উপায় খোঁজার পথ দেখিয়েছে।
চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরিণ আখতার মশক নিধনে চসিকের কার্যক্রমকে অর্থবহ ও ফলপ্রসু করতে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির জন্য চবিকে দায়িত্ব দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ দায়িত্বটি ছিল আমাদের জন্য একই সাথে চ্যালেঞ্জের এবং গর্বের। একটি কার্যকর ও ফলপ্রসু প্রস্তাবনা ও সুপারিশসমৃদ্ধ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে আমরা চেষ্টা করেছি। এতে মেধা, যোগ্যতা ও সামর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে গৃহীত ব্যবস্থায় মশক নিধন সফল হলে গবেষণার শ্রম সার্থক হবে।
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন উপস্থাপন সভায় বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, ড. মো. ওমর ফারুক, ড. তাপসী বোস, ড. এইচ.এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।