নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র চলবে না : আমীর খসরু

নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বলেছেন, আগেই বলে দিচ্ছি, বড় বড় স্বৈরাচারকে দেশের মানুষ বিতাড়িত করেছে। ওই প্রক্রিয়ায়, ভিন্নরুপ-বহুরুপের ভাব দিয়ে আর কোনো স্বৈরাচারকে থাকতে দিব না। ভোট দিতে হবে, নির্বাচন দিতে হবে; দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করে ষড়যন্ত্র চলবে না।

আজ সোমবার বিকেলে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সদরঘাট থানা বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আমীর খসরু বলেন,  এখানে মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করবেন, ভোট পিছিয়ে দিবেন, বিলম্বিত করবেন, অন্য ষড়যন্ত্র করে ওই শেখ হাসিনা একভাবে স্বৈরাচার, আপনারা অন্যভাবে এসব করে লাভ হবে না। তাই আগে থেকে জনগণের দেওয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। শেখ হাসিনা জনগণের দেওয়ালের লিখন পড়তে পারে নাই। সমস্ত আন্দোলন বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য।

তিনি বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার অপেক্ষায় আছে। জীবনের নিরাপত্তা দেশের মানুষ চাই। তাই কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে। সেটা কি জনগণ গ্রহণ করবে? যত সংস্কার প্রয়োজন, তত সংস্কার দেশের সংসদে ইনশাআল্লাহ; বিএনপি এবং সহযোগীরা আগামী সংসদে সব সংস্কার ৩১ দফার মধ্যে আছে। এর বাইরেও যদি সংস্কার থাকে; জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে সংস্কার করবো।

বিএনপির স্থায়ী সদস্য বলেন, ‘দেশ স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। দেশ যেই কারণে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে, বাকশালীদের বিতাড়িত করেছে, এরশাদকে বিতাড়িত করেছে; তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করা। গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদের যাবেন, সরকার গঠন করবেন। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল— সে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। কারণ, সে অনির্বাচিত, দখলদার, স্বৈরাচার। বাংলাদেশে আমরা আর কোনোদিন কাউকে দখল করতে দিব না। বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচারকে ক্ষমতা দখল করে থাকতে দিব না।

আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের দোহায় দিয়েন না, শুধু নির্বাচনের সংস্কার করেন। যেখানে যাদের ঐক্যবদ্ধ আছে। নির্বাচনী সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে জনগণের মালিকানা ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচিত সংসদ সরকার আগামী দিনে যত সংস্কার সবগুলো করা হবে। আর কোনো সংস্কার, আর কারো কোনো অধিকার নেই। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যান্ডেট নিতে হবে।

সরকার পতনের সময় শ্রমিকরা ভূমিকা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, শ্রমিক ভাইয়েরা শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাস্তায় লড়াই করেছেন। গত ৩ এবং ৪ আগস্ট নিউ মার্কেট মোড়-রাস্তায় শেখ হাসিনার পতনের জন্য ভূমিকা রেখেছেন, আপনাদের আমি সম্মান জানাই, ধন্যবাদ জানাই। যারা গত ১৬ বছরে জীবন দিয়েছেন, গুম-খুন হয়েছে, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন, পঙ্গু হয়েছেন এবং জেলখানায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন, সন্তান হারিয়েছেন।

শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের (শ্রমিক) অনেক সমস্যা আছে। গভীরভাবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে কাজ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, যত সমস্যা আছে গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের সঙ্গে আমরা বসবো এবং কথা বলে সেসব সমস্যা সমাধান করবো। বিএনপির ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবে আপনাদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সমাধানের কথাও বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলন এবং স্বৈরাচারকে যেভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে; সেভাবে সবসময় তাদের চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

একইসঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় কেউ ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে থাকার চেষ্টা করলে দেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না। প্রয়োজনে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।