নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত

চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সারা দেশে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে।  গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্মঘট। শুক্রবারও সারা দেশে বন্ধ ছিল সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযান চলাচল। ধর্মঘটে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বন্দরগুলোতে। ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। আটকা পড়েছে তেল-সারসহ হাজার হাজার টন পণ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুইদিন ধরে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় খালাসের অপেক্ষায় সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোতে আটকে পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের পণ্য। এ ছাড়া বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেলগুলো অলসভাবে বসে থাকায় প্রতিটি জাহাজ ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিআইডব্লিউটিসি) নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ধর্মঘটের কারণে ৫০টিরও বেশি নদী পয়েন্টে আমদানি পণ্য খালাস এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহণ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ আছে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, বাঘাবাড়ি, আশুগঞ্জ এবং অন্যান্য ৫৬টি নদীপথে অলস অবস্থায় থাকা ৭৭৩টি লাইটার জাহাজে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ টন আমদানি পণ্য আটকা পড়েছে। এর মধ্যে ১২০টি লাইটার জাহাজ যশোরের নোয়াপাড়া ঘাট এলাকায় এবং ৭৭টি জাহাজ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে আটকা পড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে- গম, চিনি, মসুর ডাল, হলুদ মটর, লবণ, ভোজ্যতেল, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ল্যাগ, সার।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, নৌযান শ্রমিকেরা কাজ ফিরতে প্রস্তুত। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে কোনো আশ্বাস তারা পাচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী নৌযান শ্রমিক কর্মচারী দলের সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা ধর্মঘট পালন করছি। চাঁদপুরে নৌযানে সাতজন হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। খুনিদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসিতে ঝুলানো হোক।

চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ নৌযান মাস্টার-ড্রাইভার ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ বলেন, ‘নৌরুটে কোনো আইনের শাসন নাই। আমরা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছি। গত তিন বছর এই হামলা আরও বেড়ে গেছে। আইনের শাসন না থাকার কারণে চাঁদাবাজি হয় আমাদের এই রুটে।’

এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাজারে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ সংকট তৈরি আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বহির্নোঙ্গরে আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য ২০টি মাদার ভ্যাসেল দুইদিন ধরে অপেক্ষমাণ আছে। এসব জাহাজে মটর, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন বীজ, সার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ প্রায় সাড়ে চার লাখ মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের খোলা পণ্য আছে। মাদার ভ্যাসেলগুলোতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে জাহাজের ওয়েটিং টাইম বাড়ছে। প্রত্যেকটি জাহাজের ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বাবদ ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার গচ্চা যাচ্ছে। তবে বর্হিনোঙ্গরে খোলা পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কনটেইনার জেটিতে খালাস পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘ধমর্ঘটের কারণে পণ্য সরবাহের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সেটা ব্যাহত হচ্ছে। আবার জাহাজগুলো থেকে যেখানে খালাস বন্ধ আছে, সেখানে জাহাজ জট তৈরির সম্ভাবনা আছে। কারণ, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর পণ্য খালাস করে আবার পণ্য বোঝাই করে সেগুলো রওনা দেওয়ার যে প্রক্রিয়া তাতে একটা জট লেগে যাবার আশঙ্কা আছে।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি নবী আলম বলেন, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ ভীষণ সংকটে পড়ে যাবে। বাজারে প্রভাব পড়বে। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব সংকটের সমাধান করে পরিস্থিতির সমাধান করে ফেলা দরকার।