বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এ আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ কেন আপিল করেননি তা জানতে চেয়েছেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যে আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছেন আদালত।
আজ রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত আবেদন শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছেন। সেদিন পর্যন্ত কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। ফলে এখনই মুক্তি মিলছে না তার।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক। বাবুল আক্তারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মহাবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল ও আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বাবুল আক্তারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
সে আদেশের ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে কারাবন্দি বাবুল আক্তার আজ রোববার বিকেলে জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন, এমন খবর চাউর হয়েছিল নগরজুড়ে। বিকেল থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারের কারাফটকের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন তার বর্তমান স্ত্রীসহ স্বজন ও আইনজীবীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও বাবুল মুক্তি না পাওয়ায় তারা একে একে বের হয়ে চলে যান।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বাবুল আক্তার আজ (রোববার) মুক্তি পাচ্ছেন না। সব কাগজপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। কিন্তু সেগুলো আসতে দেরি হওয়ায় আমরা চেক করতে পারিনি। আগামীকাল (সোমবার) তিনি জামিন পেতে পারেন, আবার না-ও পেতে পারেন।
অপরদিকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন সন্ধ্যায় বলেন, ‘নানা তালবাহানার পর আজ বিকেলে আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়। কথা ছিল বিকেল ৫টায় তাকে মুক্তি দিবে। আমাদের বলা হয়েছে তার আগেই যেন আমরা যাই। কিন্তু আগে গেলেও আজ মুক্তি দিবে না বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামিন আদেশেই উচ্চ আদালত বলেছেন স্টে অর্ডার ছাড়া তার মুক্তি কেউ আটকাতে পারে না। আর জামিন হওয়ার পরেও তিনি কারাগারে থাকাটা তো কষ্ট দেওয়া, হয়রানি করা। যে অশুভ শক্তি শুরু থেকেই কাজ করছে এর পেছনে সেই শক্তিই এখন প্রভাব বিস্তার করছে। মুক্তি দিলে সে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কোর্ট যদি তাকে আবার আত্মসমর্পণ করতে বলে সে করবেন।
প্রসঙ্গত; ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলার বাদী ছিলেন স্বামী বাবুল আক্তার। তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একইদিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। মাহমুদা হত্যার ঘটনায় ২০২১ সালের ১২ মে বাবুলকে গ্রেফতার করে পিবিআই। মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সংস্থাটি। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে।