চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, শিক্ষকরা আজকের সভায় দলাদলির যে অভিযোগটি করেছেন তা হতাশাজনক। একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিৎ নয়। যে কারো ডে কোন মতাদর্শে বিশ্বাস থাকতে পারে কিন্তু সেটা অফিস টাইমের বাহিরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে চর্চা করা উচিৎ। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিটে যাব।
আজ সোমবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা বিভাগের সাথে মত বিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, আমি নিজে একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, দল করি। কিন্তু আমি এও মনে করি যে, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। আর যখন আমি একটা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবো সেখানে রাজনীতি টেনে আনবনা। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোন অন্যায় করবনা। এজন্য চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের আমি আসতে বারণ করি। অথচ আমিই সন্ধা হলে দলীয় কার্যক্রমে যাই। ঠিক একইভাবে এখানে যারা এসব দলবাজি করবে তাদেরকে আমি বরদাস্ত করব না।”
রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ফাঁকি দেয়া মেনে নেয়া হবেনা জানিয়ে মেয়র বলেন, ছাত্ররা যাতে ঠিকমত পড়াশোনা করে ,ঠিকমত যাতে তারা ক্লাসে আসে, কোন ছাত্র ক্লাস যাতে ফাঁকি না দেয়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যে টাইমিং আছে সে টাইমিংএ যাতে সবাই একাডেমিক কার্যক্রমে থাকে তা নিশ্চিতে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোন শিক্ষক যাতে বাড়ির পাশে পোস্টিং থাকায় ক্লাসের ফাঁকে বাসায় চলে গেল এগুলো যাতে না হয়। প্রধান শিক্ষককে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশলে, বিভিন্ন প্রেসার দিয়ে চলে গেলে এই ধরনের কোন উদাহরণ যদি থাকে, এ ধরনের ফাঁকিবাজ কোন শিক্ষক যদি থাকে বা কোন প্রধান শিক্ষকের উপর হুমকি দেয় কিংবা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয় প্লিজ লিস্ট দিবেন। সে যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন শাস্তি হবে।
চসিকের শিক্ষা বিভাগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, অতীতে অনেক কিছু হয়েছে। অনেকের সিগনেচারে শ্রমিকও শিক্ষক হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এটা আর হবে না। বনা। আমি ইতিমধ্যে অনেকে ঘুরাঘুরি করছিল আমার সাথে দেখা করতে আমি তাদেরকে মানা করে দিয়েছি। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করব এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করব। শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির জন্যও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বৈষম্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল কনসেপ্টটা ছিল মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ। ওই আদর্শকে সমুন্নত রেখে আমরা যদি চলি তাহলে আমরা সমস্ত দলাদলি ভুলে গিয়ে দেশ গঠনের কাজে ছাত্রদেরকে যাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে সেই শিক্ষাই অবশ্যই দিব।
“ছাত্রদের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। আমরা দেখেছি তারা রাস্তাঘাটে ট্রাফিক বিভাগের কাজ করেছে। তারা তো আন্দোলন করেছেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করেছে। কাজেই আমরা তাদেরকে দিয়ে অনেক ভাল কাজ করাতে পারি। বাবার পরে যদি কোন ছাত্র কাউকে মান্য করে সেটা হচ্ছে শিক্ষক। আমরা যখন দেখি যে একজন শিক্ষককে একটা ছাত্র অপমান করছে ভালো লাগে না। যখন আবার এই জিনিসগুলো খুব ডিটেইলসে যাই যে কেন একটা ছাত্র একটা শিক্ষকের অপমান করবে, কেন এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলবে? ওই ঢুকতে ঢুকতে ঢুকতে লাস্টে দেখা যাচ্ছে চরম অসঙ্গতি। হয়তোবা সেখানে অনেক করাপশনের ব্যাপার চলে আসছে। হয়তোবা কারো সাথে অসদাচরণ। হয়তোবা এমন এমন কিছু কথাবার্তা চলে আসে যেগুলো আমি এখানে বলতে চাচ্ছিনা। কাজেই এই বিষয়গুলোতে আমাদের শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে হবে।
নৈতিক শিক্ষার উপর জোরারোপ করে মেয়র বলেন, আমরা মৌলিক শিক্ষা নৈতিক শিক্ষার উপর কিন্তু অতটা জোর দিচ্ছি না। একজন মানুষ একজন ভালো ডাক্তার হয়তোবা হতে পারে পড়াশোনা করে। কিন্তু ভালো ডাক্তার হয়ে যদি আমি বিনামূল্যে একটা গরীব রোগীকে চিকিৎসা না করি সেক্ষেত্রে আমার ভালো ডাক্তারের আর কোন মূল্যায়ন থাকে না। ঠিক তেমনি প্রতিটি প্রফেশনে আমি যদি মানবতাটা দেখাতে না পারি তাহলে কিন্তু সেটার কোন দাম থাকে না। এই শিক্ষাটাই আপনারা দিতে চেষ্টা করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা সে মানুষের মত মানুষ হতে পারে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তারসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।