আজ শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসতে যাচ্ছেন বিএনপির ত্যাগী নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রের আসনে বসছেন তিনি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা, হামলা, গুন-খুনের মধ্যেও টানা ১৫ বছর দলীয় আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে রাজপথ দখলে রেখেছেন এই নেতা। এর মধ্য দিয়ে নতুন যাত্রা ও দায়িত্ব শুরু হবে। শপথের একদিন পর মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর মেয়র শাহাদাত যাবেন চট্টগ্রামে।
এর আগে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় শপথ অনুষ্ঠান। চসিক মেয়রের ডা. শাহাদাতকে শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
এদিকে চসিকের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাতকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুনে ভরে গেছে নগরের টাইগারপাস সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় সড়ক। নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক। ডা. শাহাদাতের মেয়রের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে উচ্ছ্বসিত নগরবাসীও। নগরপিতা পেশায় চিকিৎসক, তাই সবার প্রত্যাশা পরম সেবার। শুশ্রূষার মাধ্যমে রোগীকে যেভাবে সারিয়ে তুলেন, তেমন করেই সারিয়ে তুলবেন রুগ্ন চসিককেও।
চসিক সূত্রে জানা যায়, আগামী ৫ নভেম্বর সকালে ঢাকা থেকে রেলপথে রওয়ানা হবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানাবেন। পরে হযরত আমানত শাহ ও হযরত বদর শাহ (রহ.)-এর মাজার জেয়ারত করবেন তিনি। এরপর সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনে (লালদিঘীর পাড়) বৈঠক করাসহ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিকেলে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। ৬ নভেম্বর থেকে নিয়মিত অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, নতুন মেয়রের আগমন উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। তার কক্ষে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার, বার্নিশ করা হয়েছে আসবাবপত্র। ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও আনা হয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এছাড়া নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসা নগরের বাদশা মিয়া সড়কে। আদালতের রায়ে মেয়র ঘোষণার পরই খানাখন্দে ভরা সেই সড়ক সংস্কারে নেমে পড়ে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। করা হয় কার্পেটিংও। এছাড়া নিয়মিত জ্বলছে সড়কবাতি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়র কার্যালয়ে এলে বরণের আনুষ্ঠানিকতা সারব। এতদিন মেয়র না থাকায় সবকিছু ছিল ছন্দহীন। এখন কাজে গতি ফিরবে।
ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে সকালে রেলপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দিবেন তিনি। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। পরে সেখান থেকে হজরত আমানত শাহ এবং হজরত বদর শাহ (রহ.) এর দরগাহ জেয়ারত করবেন তিনি। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ।
প্রসঙ্গত; ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।
এর আগে নির্বাচনে কারচুপি প্রমাণ পাওয়ায় গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত তাকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। একইসঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবকে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দেন। ৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের চিঠি পাওয়ার পর করণীয় জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কারণ ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধন করে রেজাউল করিম চৌধুরীসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই দিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।