জনগণের রায় বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার : মীর নাছির

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেছেন, আওয়ামীলীগের আয়নাঘরে এখনো কতজন বন্দি আছে সেটা কেউ জানে না। কেয়ারটেকার সরকারকে আমি অনুরোধ জানাই, আপনারা আয়নাঘরে কারা এখনও বন্দি আছে, কারা এখনও টর্চার সেলে আছে, আমরা তাদের দেখতে চাই। আয়নাঘরে গুম হয়ে থাকা আমাদের দলের নেতাকর্মীসহ সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আপনারা এসেছেন, আমরা সবাই আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। জনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করা দরকার। আপনারা আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় একটা অধ্যাদেশ আনবেন যে, আগামী নির্বাচনও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বললে আওয়ামী লীগের গা চুলকানি শুরু হয়। এই গা চুলকানি বন্ধ করার জন্য আমরা অন্তত দুইটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে চাই।

তিনি বৃহস্পতিবার (১৫ আগষ্ট)  বিকেলেনগরীর কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা এবং খুনি হাসিনাসহ তার খুনি দোসরদের বিচারের দাবিতে  মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে  বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন।

বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর পর মঞ্চে উঠে মাইক ধরার সুযোগ পেয়েছি। যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে ইমিগ্রেশন পার হলাম তখনও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি আদৌ কি বাংলাদেশে এসেছি নাকি অন্য কোথাও পৌঁছে গেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ স্বৈরাচারের পতন কীভাবে হলো আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমার ছোট ছোট সন্তানরা রাস্তায় নেমেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের হাজারো সালাম জানাই। আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে তাদের কাছে। যারা ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করে তারাই এভাবে গুলির সামনে এগিয়ে যেতে পারে। পিছপা হয় না।

সভায় মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সে বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। তার হাত রক্তে রঞ্জিত। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে বন্দী করে রেখেছিল।

তিনি বলেন, তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে দেশে আসতে দেয় নাই। আমরা বলতে চায়, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো, রাষ্ট্র সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।

 সভায় মীর হেলাল বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রের সকল কাঠামোকে ধবংস করেছে। দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার থেকে দেশবাসী মুক্তি পেলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও দেশে অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে। তাই কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। ৫ আগষ্টের পর থেকে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। তাই আমাদের দলকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ এখনো আমাদের পরিপূর্ণ বিজয় আসেনি। যেদিন আমরা নির্বাচনে জয় লাভ করবো সেদিনেই আমাদের পরিপূর্ণ বিজয় হবে। তাই আমাদেরকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি উপহার দিতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশটা আমাদের সবার। এ দেশ আমাদেরই গড়তে হবে। কেউ যেন কোনো নির্যাতন নিপীড়নের শিকার না হন। যে কোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন থাকতে হবে।

এতে আরো বক্তব‌্য রা‌খেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন প্রমুখ।