নগরীর একটি হাসপাতালে জন্মের পরপরই বিক্রি করে দেয়া যমজ শিশুদের দত্তক নেওয়া অভিভাবকদের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত যমজ ওই ভাই-বোন দত্তক নেওয়া অভিভাবকদের জিম্মায় থাকবেন।
সোমবার (১০ জুন) চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম জান্নাতুল ফেরদৌস এই আদেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেদুল্লাহ জানান, বিক্রি করা যমজ দুই শিশুকে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সোমবার (আজ) চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত যমজ ভাই-বোনকে দত্তক নেওয়া অভিভাবকদের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত।
এর আগে শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর এলাকা ও নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রি করা ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টো ইউনিট। রোববার (১০ জুন) চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুকে রাখার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনালে।
আদালতে করা মামলায় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাশের পলি হাসপাতালে বিলকিসের (ছদ্মনাম) যমজ সন্তান হয়। হাসপাতালের ডাক্তার ও বিলকিসের স্বামী মিলে তাঁর সন্তানদের (১ ছেলে ও ১ মেয়ে) অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেয়। আর বিলকিসের বড় মেয়ে ও ছেলে এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরে এসব বিষয়ে হাসপাতালের ডাক্তারকে জানালে বাচ্চা দুটি অসুস্থ থাকায় অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে যমজ সন্তানদের না পেয়ে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন বিলকিস।
পরে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোকে নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্তে নেমে জানতে পারে, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শিরু আকতার নামে এক নারীর ঘরে কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। আরেকজন বোয়ালখালীর রুনা আকতারের কোন মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। তাদের সঙ্গে ঘটনাক্রমে সীতাকুণ্ডের রাশেদা বেগমের পরিচয় হয়।
রাশেদা বেগম তাদের আশ্বস্ত করে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে পছন্দমত নবজাতক ছেলেমেয়ে এনে দিতে পারবেন। পরে রাশেদা বেগম সন্তান নেওয়া দুই নারীর সঙ্গে সন্তানসম্ভবা বিলকিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা রাশেদা বেগমকে দিতে রাজি হন। এছাড়াও প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ দিতেও রাজি হন তারা।
শনিবার (৭ জুন) দিনভর অভিযান চালিয়ে ছেলে শিশুটিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রাণীরহাট এলাকায় এক নারীর হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাকে তিনি তিন লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, মেয়ে শিশুটিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকায় এক নারীর হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাকে তিনি এক লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক নিয়েছিলেন।