বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উদার রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অবকাঠামো, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো প্রকল্প, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বিবেচনা করার অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চাইলে সময় ও খরচ কমিয়ে বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা ও মিরেরসরাইয়ে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য কেবল ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেই নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রপ্তানি করতে সক্ষম হবেন।
ভারতীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এখন বাংলাদেশের দিকে আরও দৃষ্টি দিয়ে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বল্প-খরচ এবং বিশাল ভোক্তা-সংখ্যার সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক এবং রোগী ভারতে যায়। হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে, উভয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন আরও বৃদ্ধি পাবে ও বিকশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেছে। এটি সাপ্লাই চেইনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তারপরও এটা ভালো খবর যে, এসব চ্যালেঞ্জের পরও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠতে বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য-সহায়তা নির্ভরতার সেই দিনগুলো পার করে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিভিন্ন শস্যসহ বাংলাদেশ এখন চাল, শাকসবজি, স্বাদু পানির মাছের বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবিলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
সূত্র : বাসস।