এর আগের চার টি-টোয়েন্টিতে জয় নেই। সবশেষ ‘ক্লোজ’ ম্যাচটাও হয়েছিল সেই ১১ বছর আগে। ওই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজের শুরুটা করল দারুণ এক জয় দিয়ে। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটা মাহমুদউল্লাহর দল করল ২৩ রানের দারুণ এক জয় দিয়ে।
মন্থর উইকেটে মন্থরতর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল কেবল ১৩১ রানের পুঁজি। প্রতিপক্ষ যদিও খর্বশক্তির অস্ট্রেলিয়া, তবু এ রান নিয়ে জেতাটা যথেষ্ট কঠিনই।
তবে সে কঠিনটা সহজ করতে হলে চাই দুর্দান্ত এক শুরু, সেটাই এনে দিয়েছিলেন তিন স্পিনার। প্রথম বলেই শেখ মেহেদি হাসানের দারুণ এক আর্মারে বিভ্রান্ত হন অ্যালেক্স ক্যারি, ভাঙল তার রক্ষণ, বল গিয়ে আঘাত হানল স্টাম্পে। রানের খাতা খোলার আগেই প্রথম উইকেট হাওয়া অজিদের।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে জশ ফিলিপ ছক্কা মেরে নাসুমকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক বল পর ফ্লাইটে তাকে বিভ্রান্ত করে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন নাসুম। দশ রানে অজিরা হারায় দ্বিতীয় উইকেট। পরের ওভারের প্রথম বলে সাকিব বোল্ড করলেন মোজেজ হেনরিকেসকে। ১১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা তখন রীতিমতো কাঁপছে।
এরপরই ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড আর মিচেল মার্শ। ৪৫ বলে ৩৮ রানের এক জুটিতে শুরুর ধাক্কাটা সামলেও নেন দু’জনে। তবে ইনিংস মেরামতে দেওয়া মূল্যবান কিছু ডট বল, চাপ ধীরে ধীরে বাড়িয়েই চলেছে অজিদের ওপর। দশম ওভারের চতুর্থ বলে নাসুমের বলে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে ওয়েড ফিরলে চাপটা বাড়ে আরও।
দশ ওভারে আশি রান, লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না অজিদের। বিশেষত অ্যাশটন অ্যাগারকে সঙ্গে নিয়ে যখন উইকেটে জমে গিয়েছিল মিচেল মার্শের জুটি, তখন তো স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছিল রীতিমতো।
১৪তম ওভারে অ্যাগার করে বসলেন একটা ভুল, নাসুমের বলে হিট উইকেটের কাটায় হারালেন উইকেটটা, ম্যাচের ফলটাও যেন একটু একটু করে চলে আসতে থাকে বাংলাদেশের দিকে। দলীয় ৮৪ আর ব্যক্তিগত ৪৫ রানে যখন মার্শ ফিরলেন, তখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল জয়।
তবে ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তা’, আর অতীত; বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রেখেছিল শেষতক। এমন হাতের মুঠো থেকেও যে বহু ম্যাচ গিয়েছে হাত ফসকে!
না এদিন কোনো ভুল নয়। স্পিনারদের সাজিয়ে দেওয়া মঞ্চে দারুণভাবে শেষটা করলেন দুই পেসার মুস্তাফিজ আর শরীফুল। টার্নার আর স্টার্ককে শিকার বানালেন মুস্তাফিজ, শরীফুলের ভাগে গেল টাই আর জ্যাম্পার উইকেট। তাতেই মধুর ২৩ রানের জয় এসে ধরা দেয় বাংলাদেশের হাতে।
এর আগে মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জ্যাম্পাদের মিতব্যয়ী বোলিং সামলে সাকিব আর নাঈম শেখের ত্রিশোর্ধ্ব দুটো ইনিংস আর আফিফ হোসেনের ক্যামিওতে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৩১ রানের পুঁজি। বোলারদের কল্যাণে যে পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়েছে অনায়াসেই। তাতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।
দারুণ এই জয়ে ‘প্রথম জয়ের’ ইতিহাস তো বটেই, একটা ছোটখাটো রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ জেতেনি আর কখনো। দেড়শ রানের নিচে পুঁজি নিয়েই জয় ছিল কেবল তিনটি। তাও আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ সারির দলগুলোর বিপক্ষে ছিলনা একটিও। সেই ‘প্রথম’ জয়টাই এলো অজিদের বিপক্ষে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শুরুটা বুঝি এর চেয়ে ভালো হতেই পারত না বাংলাদেশের।