দেশের ইতিহাসে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের নতুন দিগন্ত সূচনা আগামীকাল: বছরে সাশ্রয় হবে সরকারের ২৩৬ কোটি টাকা

দেশের ইতিহাসে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহে নতুন দিগন্ত সূচনা হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২শ ৪২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ঘণ্টায় ২৬০ থেকে ২৮০ মেট্রিক টন ডিজেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে। বছরে যাবে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিকটন। বর্তমানে নৌ ও সড়কপথে ডিজেল পরিবহনে বছরে খরচ হচ্ছে ৩২৬ কোটি টাকার বেশি। এদিকে পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহনে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হবে বছরে ৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে পাইপলাইনে পাঠালে বছরে শুধু পরিবহণ খরচে সাশ্রয় হবে সরকারের ২৩৬ কোটি টাকা।
গত দেড় মাসে সফল পরীক্ষা মূলক ভাবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল কোম্পানী গুলোর ৫ কোটি লিটার ডিজেল পাঠানো হয় ঢাকায়। সিসটেম লস ছাড়া মাত্র ১২ঘণ্টায় ঢাকায় তেল পৌঁছায় খুশি বিপিসি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠরা।
পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রকল্পটি ২০১৬ সালে হাতে নেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল । কিন্ত করোনা মহামারি সহ বিভন্ন জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।

কাজ শেষে গত ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে পাইপ লাইনে ডিজেল সরবরাহের কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৫ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহে তেমন ত্রুটি ধরা পড়েনি বলে জানাগেছে।
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ থেকে ৬৮ লাখ মেট্রেক টন। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশই ডিজেল এবং ঢাকা বিভাগেই চাহিদা ৪০ শতাংশ । এতোদিন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় তেলের ট্যাংকারে (জাহাজে) নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে ডিজেল পাঠাতে সময় লাগতো ৪৮ ঘণ্টা। সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হতো। এতে বছরে পরিবহণ খরচ, সিসটেম লস এবং সময় অপচয় সবই ছিল তুলনামূলক বেশি । পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হলে মাত্র ১২ ঘণ্টায় জ্বালানি তেল নারায়ণগঞ্জের ডিপোতে পৌঁছবে। এতে পরিবহন খরচ কমে আসবে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা।
বিপিসি সূত্রে জানাযায়, পাইপলাইন প্রকল্পের দুটি অংশের মধ্যে একটি অংশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত।
পরীক্ষামূলক ভাবে সব কিছু স্বয়ংক্রিয় স্ক্রিনে মনিটরিং করা হয়েছে, এতে পাইপলাইনে তেল পাঠাতে কোনো জটিলতা হয়নি। পাইপ লাইনে ঘণ্টায় ৩২০ মেট্রিক টন জ্বালানি পাঠানোর সক্ষমতা থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৬০-২৮০ মেট্রেক টন পাঠানো হয়েছে।
বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের লক্ষে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত, সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়, পরিবেশ সুরক্ষা, ঝুঁকিমুক্তভাবে দ্রুততম সময়ে তেল পরিবহনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত আড়াইশ’ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
আলোচিত পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের যুগান্তকারী এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান।
উদ্বোধনের পর নদীপথে পাইপলাইনেই নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো হবে বলে জানাগেছে।