কোতোয়ালীর ওসি নিজাম ছিলেন ভোট ডাকাত : মেয়র শাহাদাত

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তখনকার টেরিবাজার সমিতির নির্বাচনের সময় কোতোয়ালীর ওসি ছিলেন নিজাম। সে আরেক ভোট ডাকাত, ভোট ডাকাতের সর্দার। নির্বাচনে প্রথমে বলেছিল, সব ঠিক আছে। কিন্তু নির্বাচন যখন শুরু হয়, মেরে টেরিবাজারের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে রাতের অন্ধকারে জোর করে আওয়ামী ব্যবসায়ীদের জিতিয়ে দেয়। ঠিক যেভাবে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে এবং বিনাভোটে নির্বাচন করেছে তারা।

গতকাল বুধবার রাতে নগরীর শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের বাকলিয়া কে বি কনভেনশন হলে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (দক্ষিণ) ডিসি শাকিলা সুলতানা।

অভিষেক উপলক্ষে ঐতিহ্যের টেরিবাজার নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সমিতির মৃত্যুবরণ কারী কর্মকর্তাদের স্মরণ করে তাদের মাগফেরাত কামনা করা হয়।

মেয়র বলেন,  অতীতের ১৫ বছরে যারা এফবিসিসিআইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, চেম্বার অব কমার্সে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম গুটি কয়েক ব্যবসায়ী। তাদের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্ত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আশা করছি এখন যারা আছেন, তারা সকল ব্যবসায়ীর স্বার্থকে দেখে প্রাধান্য দিবেন।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ভালো মানের কিছু কিনতে চাইলে অবশ্যই টেরিবাজারের নাম আসে। কিন্তু গত ১৬টি বছর কিভাবে জোর করে বিনাভোটে  টেরিবাজার সমিতি গঠন করেছে। নির্বাচনের নামে বারবার প্রহসন হয়েছে। যেভাবে সারা বাংলাদেশে তারা ভোটের অধিকার হরণ করেছে, ঠিক একইভাবে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে তারা জোর করে ভোটের অধিকার হরণ করেছে।

তিনি বলেন, একটি বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা আজ অভিষিক্ত হয়েছেন, দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ দায়িত্ব অর্পনের মধ্য দিয়ে, অভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী তথা সমগ্র চট্টগ্রামের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করবেন।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, টেরিবাজার বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই দেশ অগ্রসর হয়। ব্যবসায়ীদের ভূমিকার কারণে দেশ একটি সত্যিকার অর্থে গতিশীল, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তরিত হয়। তবে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারেন না। প্রশাসনের সাথে ব্যবসায়ীদের কাজ আদায় করতে গিয়ে ঘুষের প্রথা চালু হয়। আর একটা হচ্ছে আমাদের দেশে অন্যায়, অনাচার, ব্যভিচার আর বিশ্ববাজারে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে। ইসলামে যে একটা অর্থনীতি আছে, আমাদের ওলামায়ে কেরামগণ অর্থনীতির ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারেন না। যার কারনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন আমার পিয়নেরও ৪০০ কোটি টাকা আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিসি শাকিলা সুলতানা বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র টেরিবাজার। এই মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। মার্কেটে বিপুলসংখ্যক মহিলা ক্রেতা আসেন, তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকতে হবে। এ মার্কেটকে আরো উন্নত জায়গায় নিয়ে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। আমিও চট্টগ্রামের মেয়ে হিসেবে আমার দায়িত্ব কালীন সময়ে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন।

নবনির্বাচিত সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা আজকের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। ২০১৭ সালের নির্বাচনে ব্যবসায়ী সমিতিতে রাজনীতির প্রভাব পড়েছিল। তবে ৫ আগস্টের পর মানুষের মাথার ওপর থেকে পাথর সরে গেছে। আমাদের সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও সমিতির মধ্যে রাজনীতি প্রবেশ করতে দেব না। আমাদের কমিটির মেয়াদ ২ বছর। মেয়াদের একদিনও বেশি দায়িত্বে থাকব না। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি ও অভিষেক উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন।

উক্ত অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আলহাজ্ব মো. আলমগীর, ফরিদুল ইসলাম, গোলাম নবী, যুগ্ম সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মহিউদ্দীন, শেখ শহিদ সোহরাওয়ারদী বাহাদুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতেহাদ হোসেন রাজিব, অর্থ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা এমরানুল হক সাইয়েদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. বাকের উল্যাহ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. হারুনর রশিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইব্রাহিম পারভেজ, দপ্তর সম্পাদক মামুনর রশিদ, অডিটর সম্পাদক দিদারুল আলম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দীন, কার্যনির্বাহী সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, মোহাম্মদ জাবেদ ও আবু ছালেক প্রমুখ।