চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে থাকা প্রায় ১১ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারি পরিচালক মো. এমরান হোসেন সোমবার (৮ জুলাই) আদালতে উভয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক বেগম জেবুননেছা দুদককে উভয়ের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু বলেন, ‘কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর আয়ের উৎসের কোনো সঙ্গতি পাওয়া যায়নি। এখন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নোটিশ দেবেন।
২০২৩ সালের ৩১ মে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে কামরুল হাসানের সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৪ আগস্ট তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন চলতি বছরের ১৩ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল হাসান ও সায়মার মোট স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার। এর মধ্যে আছে, চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরে পৃথকভাবে ৪০ শতক জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে শূন্য দশমিক ৩৩ শতক ও পৃথকভাবে দুই কড়া তিন সমস্ত ছয় ভাগের এক দন্ত ভিটি ভূমি, ঢাকার সাভারে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি, সাভার সিটি সেন্টার এন্ড টাওয়ার নামে একটি বারো তলা ভবনের বেসমেন্টে ২২টি দোকানের সমান জায়গা যা ইনফিনিটি মেগামল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ তলায় ছয়টি দোকান এবং এর ওপরে সাতটি ফ্ল্যাট।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও আছে, নগরীর খুলশী মৌজায় দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের আওতাধীন জমিতে নির্মিত ফয়জুন ভিলা নামে একটি ভবনে মোট ২৭০৬ বর্গফুট জায়গা, পশ্চিম নাছিরাবাদে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পৃথকভাবে শূন্য ছয় দশমিক ৫৯ শতাংশ নাল জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে সাত শতাংশ ভিটের ওপর ঘর, ঢাকার সাভারের আনন্দপুরে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ নাল জমি, সাভার সিটি টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট এবং সিডিএর অনন্যা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার একটি প্লট।
উভয়ের অর্জিত অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে এক কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে আছে, সোনালী ব্যাংকে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সায়মা হাসানের নামে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের চারটি লাইটারেজ জাহাজ- এমভি প্যাসিফিক রাইডার, এমভি পানামা ফরেস্ট-১, এমভি রাইসা তারাননুম এবং বার্জ আল বাইয়েৎ।
মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পদোন্নতি পেয়ে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী-বাঁশখালীসহ একাধিক থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করেন।
সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাবার পর তার সিএমপিতে পদায়ন হয়। তিনি সিএমপির প্রসিকিউশন শাখার সহকারি কমিশনার ও পরবর্তীতে অতিরিক্ত উপ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (অপরাধ) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদে আছেন।