কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না মন্তব্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, একটি ভবন সঠিকভাবে না করলে সেটি বোঝা হয়, পরে ভবনটি ভাঙতে হয়। যদি কেউ সীমা লঙ্ঘন করেন তাহলে শাস্তির পক্ষে আমার যতটুকু করার আছে ততটুকু আমি করবো। আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে আমি কঠোর হয়ে যাবো। আল্লাহর ওয়াস্তে এমন কাজ করবেন না। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো ছাড় দেইনি, ভবিষ্যতেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রেডিসন ব্লুর মেজবান হলে ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্স এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, পাহাড় কেটে ফেলছে আপনারা কী করছেন? ঢাকায় খালের ওপর মার্কেট আমরা ভেঙে দিছি। খারাপকে খারাপ বলেন, ভালোকে ভালো বলেন। জনগণের ভোট নিয়ে প্রতারণা করা যাবে না। আমি মানুষ খারাপ হতে পারি, কিন্তু দায়িত্ব পালনে পিছপা হই না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। ভালোকে ভালো বলবেন, খারাপকে খারাপ বলবেন। যদি দায়িত্ব পালণ করতে গিয়ে আইন সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে সেটাও বলবেন। আমি চেষ্টা করবো।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে নগরের আর কোন অলিগলিতে অন্ধকার থাকবে না। বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে, মেইনটেইনস ব্যয়ও কম হবে। আমি মেয়র হিসেবে কথা দিচ্ছি এ প্রকল্প ত্রুটিমুক্তভাবে সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ, নগরবাসীর বিনোদন স্পট বাড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। ইতিমধ্যে চসিকের তিনটি ওয়ার্ডকে স্মার্ট ওয়ার্ড গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চসিকের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (স্মার্ট সিটিজ) নিরাজ কুমার চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকার টোকেন অফ ফ্রেন্ডশীপ হিসেবে কাজ করবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধবভাবে চট্টগ্রামকে আলোাকিত করা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রকল্পের সফলতা কামনা করেন। স্বাগত বাক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নূরে আলম মিনা, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কজুড়ে এলইডি লাইট লাগানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়িত হলে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিল কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও বাতি গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০ টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে বলে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান সওদাগর পোল থেকে ইসহাক সওদাগর পোল পর্যন্ত সড়কের একপাশে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে চসিক। জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’ এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি–৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার।