চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে জন্মের পরপরই বিক্রি করে দেয়া যমজ শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও নগরের অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিশু দুটির বাবা-মাকে।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে নগরীর বার কোয়ার্টার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা।
তিনি বলেন, বিলকিস তাঁর স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই গর্ভে থাকা অবস্থায় যমজ সন্তানদের ‘বিক্রির’ সিদ্ধান্ত নেন। গত জানুয়ারিতে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে জন্ম নেয় ফাহমিদা ও রায়ান। স্বেচ্ছায় স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দুই শিশুকে রাশেদা নামে এক নারীর মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেন মুন্নী-হাবিব দম্পতি। এতে ছেলে সন্তান ৩ লাখ টাকায় এবং কন্যাসন্তানকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। তবে তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকা নারীকে ১ লাখ টাকা দেওয়ায় ওই দম্পতি সন্তানদের বিক্রির বিনিময়ে পান ৩ লাখ টাকা।
পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, এরপর সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর ‘সন্তান বিক্রির’ তিন লাখ টাকা থেকে বিলকিসকে মারধর করে তাঁর স্বামী দেড় লাখ টাকা নিয়ে যান। এতে বিলকিস তাঁর স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে মামলা করেন মুন্নী। এরপরই অভিযান চালিয়ে দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় বিক্রির মধ্যস্থতাকারী ও শিশু দু’টির বাবা হাবীব ও মা মুন্নিকে।
আদালতে করা মামলায় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাশের পলি হাসপাতালে বিলকিসের (ছদ্মনাম) যমজ সন্তান হয়। হাসপাতালের ডাক্তার ও বিলকিসের স্বামী মিলে তাঁর সন্তানদের (১ ছেলে ও ১ মেয়ে) অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেয়। আর বিলকিসের বড় মেয়ে ও ছেলে এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরে এসব বিষয়ে হাসপাতালের ডাক্তারকে জানালে বাচ্চা দুটি অসুস্থ থাকায় অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে যমজ সন্তানদের না পেয়ে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন বিলকিস।
পরে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোকে নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্তে নেমে জানতে পারে, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শিরু আকতার নামে এক নারীর ঘরে কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। আরেকজন বোয়ালখালীর রুনা আকতারের কোন মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। তাদের সঙ্গে ঘটনাক্রমে সীতাকুণ্ডের রাশেদা বেগমের পরিচয় হয়।
রাশেদা বেগম তাদের আশ্বস্ত করে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে পছন্দমত নবজাতক ছেলেমেয়ে এনে দিতে পারবেন। পরে রাশেদা বেগম সন্তান নেওয়া দুই নারীর সঙ্গে সন্তানসম্ভবা বিলকিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা রাশেদা বেগমকে দিতে রাজি হন। এছাড়াও প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ দিতেও রাজি হন তারা।