বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজার সদরে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে জেলার টেকনাফ-সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন উপজেলার ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে মোখা। এতে জেলায় কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫২২টি। এর মধ্যে সেন্টমার্টিনে ১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলায় আংশিকভাবে কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৬৯টি। আহত হয়েছেন অন্তত ৭ জন। এসব তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানান, আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে মোখার অগ্রভাগের প্রভাব পড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। বিকেল ৩টার পর এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়। মোখার পশ্চাৎভাগের তাণ্ডব চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৬টার পর এটি মিয়ানমারের দিকে বয়ে যায়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, বিকেল ৩টার দিকে মোখার মূল তাণ্ডব শুরু হয়। এতে এই দ্বীপে বেড়ার তৈরি ৭০০টি ও টিনশেডের ২৫০টি ঘর বাতাসে উড়ে যায়। দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০০ টির মতো। বিভিন্ন দোকানের অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। পুরো সেন্টমার্টিনে ৩ হাজারের মতো গাছ ভেঙে পড়েছে।’
বেশ কিছু হোটেল-রিসোর্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিনে। এই দ্বীপের প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। আগে থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর। তিনি বলেন, ‘বেড়ার তৈরি ৭০০টি ঘর উড়ে যাওয়ায় এখন অনেকে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। অতি দ্রুত এসব মানুষের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সরকারের।’
সন্ধ্যা ৬টায় তাণ্ডব শেষ হওয়ার পর ৭টার দিকে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। তবে বৃষ্টিও কম ও লোকালয়ে পানি আসেনি বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নাসিম আহমেদ জানান, কক্সবাজারের সদরে মোখার প্রভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, কক্সবাজারে ২ হাজার ৫২২ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ১০ হাজার ৪৬৯ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭ জন। কেউ নিহত হননি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবার সরকারের সহযোগিতা পাবেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠিক সময়ে আশ্রয় নেওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের পুরো দল এখনো মাঠে আছে। কক্সবাজারে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১ জন মানুষ জরুরি আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সবার মাঝে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হলো রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও টেকনাফ।’
৯৯৯-এ কল করে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আকুতি
টেকনাফের বিচ রোডের হাজম পাড়া এলাকায় একটি ঘরে আটকে পড়েন মো. কবির হোসেন (৪৭) ও তাঁর স্ত্রী রোশনারা কবির (৪০)। চারদিকে বাতাস, ঝোড়ো বৃষ্টি, গাছ ভেঙে পড়ে বাড়ির চালে-এই অবস্থায় তাঁরা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। টেকনাফের ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অতীশ চাকমা বলেন, ‘৯৯৯ কল করার পর আমরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা মোবাইল ফোনে বলেছিলেন, ভাই বাঁচাও বাঁচাও। আমাদের দল গিয়ে দেখে, তাঁরা যেখানে আটকেছিলেন সেখানে আশপাশের অনেক গাছ ভেঙে পড়ে। ওই স্বামী-স্ত্রী সুস্থ আছেন।’