চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায় নিজের চোখের সামনেই আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল খোকন বসাকের স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য। মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায়।
পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক খোকনের বাড়ি পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায়। সেমিপাকা বাড়িটির পাশেই নির্মাণাধীন আরেকটি বাড়ি আছে। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) অন্যান্য দিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে খোকনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে হঠাৎ সন্তান ও মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে খোকনের। ঘুম ভেঙে দেখেন ঘরে আগুন জ্বলছে।
বের হওয়ার দরজার মুখেই ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ততক্ষণে সেটিতেও আগুন লেগে যায় ও দরজা দিয়ে আগুনের লেলিহান শিখা ঢুকতে থাকে। খোকন এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হতে পারলেও আগুনের কারণে আর ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এরপর আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। আশেপাশের সবাই চেষ্টা করেও ঘর থেকে কাওকে বের করতে পারেনি। একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় দুই ঘণ্টা শেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ততক্ষণে সব শেষ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে বাড়ির জানালা কেটে একে একে খোকনের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৬৮), মা ললিতা বসাক (৫৭), স্ত্রী রাখি দে (৩৩), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাকের (৬) মরদেহ বের করা হয়।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শুয়ে আছেন খোকন বসাক (৪২)। তার কপাল ও পা সহ শরীরের বেশ কিছু জায়গা পুড়ে গেছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কিছুক্ষণ পর পর তিনি আগুনে দগ্ধ পরিবারের অন্যদের খোঁজ নিচ্ছেন, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। পাশেই বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন বোন ঝর্ণা ও বোনের স্বামী হারাধন। খোকনকে জানানো হচ্ছে, আগুনে দগ্ধ পরিবারের অন্যান্যরা ভালো আছে।
খোকনের বোনের স্বামী হারাধন বলেন, ভেঙে পড়বেন এ আশঙ্কায় খোকনকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে সবকিছু জানানো হবে।
এদিকে খোকন বসাক ঘটনা সম্পর্কে বলেন, প্রথমে ঘুম ভাঙার পর আওয়াজ শুনে আমি মনে করেছি প্লেন যাচ্ছে। এর কয়েক মিনিট পর আবার আমার মা ও সন্তানরা আগুন আগুন বলে চিৎকার করে। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার বাড়িতেই আগুন। পরে দরজা খুলে আমি সবাইকে বের হয়ে যেতে ডাকি। কিন্তু তারা কেউ বের হতে পারেনি।
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, মধ্যরাতে আগুনের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনের মধ্যে খোকন ঘর থেকে বের হতে পারলেও বাকিরা ভেতরেই পুড়ে মারা যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিহতদের ঘরের জানালার গ্রিল কেটে বের করা হয়। রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।