কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক পেয়েই আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী (আনারস) ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন মুরাদ মঙ্গলবার প্রতীক পাবার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মইজ্যারটেক এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও শোডাউন করেন। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল অনুযায়ী মঙ্গলবার ছিল প্রতীক বরাদ্ধের দিন। প্রতীক পাওয়ার পর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী (আনারস) ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন মুরাদ (উড়োজাহাজ) শত শত মোটরসাইকেল ও যানবাহন নিয়ে শোভাযাত্রা ও শোডাউন শুরু করেন। বিকেল চারটার দিকে শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা থেকে শোভাযাত্রাটি শিকলবাহা ওয়াই জংশন হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন মুরাদের শিকলবাহাস্থ বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জুলধা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নুরুল হক অংশ নেন। মূলত: নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষেই আওয়ামী লীগ দলীয় তিন ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য এমন শোডাউনের আয়োজন বলে জানা গেছে। এ সময় সৃষ্টি হয় মহাসড়কে তীব্র যানজট; আটকা পড়ে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কে যানবাহন আটকে মিছিল ও শোডাউন করা হলে তা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পস্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিস্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল শুক্কুর বলেন, প্রতীক বরাদ্ধকালে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা না হয়। কিন্তু কেউ কেউ আচরণবিধি না মেনে শোভাযাত্রা ও শোডাউন করেছে বলে শুনছি। তিনি আরও বলেন, বুধবার থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। আচরণ বিধি লঙ্ঘনের প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলীকে আগেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর যে সব ইউপি চেয়ারম্যান দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানান।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর (নৌকা) একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোহাম্মদ আলী (আনারস)। নবগঠিত এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের সরকার দলীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন বলে জানা গেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে।
এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ন সম্পাদক আমির আহমদ (চশমা), উপজেলা যুবলীগ সহ সভাপতি মহিউদ্দিন মুরাদ (উড়োজাহাজ) এবং মো. আবদুল হালিম (তালা) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোমেনা আক্তার (কলস), বানাজা বেগম (হাঁস), ডা. ফারহানা মমতাজ (ফুটবল) এবং রানু আকতার (বৈদ্যুতিক পাখা) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী ২ নভেম্বর এই উপজেলায় ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ হবে। উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩ হাজার ৫৯৯ জন ও মহিলা ৫৪ হাজার ২০০ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৪২টি।