ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। গণপরিবহন খাতকে আরো জনবান্ধব ও মানুষের সহজ চলাচল নিশ্চিত করতে বন্দরনগরীতে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সরকার এবং কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির এর অর্থায়নে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু করা হবে। কোইকা’র প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি হতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনে সমীক্ষার কাজ শুরু করবে তারা।
এ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন মাস্টারপ্লানসহ মেট্রোরেলের সমীক্ষার জন্য প্রিলিমিনারি সার্ভে বিষয়ক সভা মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারী) সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় তথ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় চলতি বছরের মধ্যে সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন মেট্রোরেলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে পারেন সে লক্ষ্য সামনে নিয়ে কাজ সম্পাদন করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান বাড়ছে। দেশে ১০০টি ইকোনোমিক জোন হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনোমিক জোন সবচেয়ে বড় যেখানে ৩০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া কর্ণফুলির তলদেশে টানেল নির্মিত হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর আয়তন অনেক বেড়ে যাবে। নতুন নতুন এলাকা মেট্রোর আওতাভূক্ত হবে। ফলে গণপরিবহনখাতে চাপ বাড়বে। এসব বিষয় সামনে নিয়েই চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দর হতে রেল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর প্রাথমিক চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর বা কর্ণফুলি নদীর অপর পাড়ে মেট্রোরেলের আওতা কিভাবে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ও ভাবতে হবে। এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যার ঘনত্ব মাথায় রাখতে হবে। আগামী ৫০ বা ১০০ বছরে নগরীর অবস্থা চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে হবে। তাহলে মেট্রোরেল থেকে সাধারণ জনগণ সর্বোচ্চ সুফল পাবে। মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের কাজে অনেক ব্যক্তি বা সংস্থার জায়গা দিতে হবে। কিন্তু তাতে আপত্তি দিলে চলবে না। আমার জায়গা অন্যকে কেন দেব-এ মানসিকতা পরিহার করতে হবে। জায়গার বহুমূখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সমীক্ষা চলাকালীন নগরীর বন্দর এলাকা বা কোন কোন স্থানে মাটির তলদেশ দিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া যায় কি-না সে বিষয়টিও ভেবে দেখতে তিনি এ সময় সমীক্ষা দলকে পরামর্শ দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত দুই বা তিন বছর পূর্বেও চট্টগ্রামের মানুষ মেট্রোরেলের কথা ভাবেনি। কেউ এ বিষয়ে দাবিও তোলেনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিজের দায়িত্বে নিয়েছেন বলে এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়ায় চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে তিনি এসময় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভার শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সহাসড়ক বিভাগের যুগ্মসচিব মাহবুবুর রহমান চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু বিষয়ে প্রারম্ভিক ধারণা তুলে ধরেন।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেক, কোইকা’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর খিম থে হিয়েন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বন্দর চেয়ারম্যান, সিডিএ চেয়ারম্যান, চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিন নিজ নিজ বক্তৃতায় সমীক্ষা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সভায় সকলকে স্বাগত জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, চুয়েট উপাচার্য, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, ওয়াসার এমডিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।