করোনা ও ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে। ২ মাস ১০ দিনে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে প্রায় পৌণে ৯ লাখ শিক্ষার্থী। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য একটি চাহিদাপত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।
প্রেরিত শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা মতে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত ১৫ উপজেলার ১২-১৮ বছর বয়সী মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থীকে ফাইজারের ১ম ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। ফলে শতভাগ শিক্ষার্থী ভ্যাকসিনের আওতায় আসে। সিটি করপোরেশন স্কুল ক্যাম্পেইনের আওতায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে ফাইজারের ১ম ডোজ ভ্যাকসিন। তন্মধ্যে ৩২ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে ২য় ডোজ ভ্যাকসিনও প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে স্কুল ক্যাম্পেইনের আওতায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অফিসে একই বয়সী মোট ৫ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী ১ম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। যেসব শিক্ষাথী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শিক্ষা অফিস থেকে তাদের তালিকা পাওয়া সাপেক্ষে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী শতভাগ শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সার্বিক তত্ত¡াবধানে জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে শিক্ষাথীদের মাঝে ১ম ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ কার্যক্রম সফল করতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছে-সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, কোভিড-১৯ ফোকাল পারসন ও এমওডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক সুজন বড়–য়া। এছাড়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৭ হাজার ৩৩০ জন বন্দীকে প্রথম ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৫ হাজার ১৮ জন বন্দী ২য় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।
সূত্র জানায়, কোভিড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন সুচারুরূপে পরিচালনা করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলা থেকে ১ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৫ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী ও শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আশীষ বরণ দে শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রেরণের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার বিষয়ে দেখভাল করছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ১২-১৮ বছর বয়সী সকল শিক্ষাথী ফাইজার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। অনেকে ২য় ডোজ ভ্যাকসিনও গ্রহণ করেছে। যদি কোন শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন গ্রহণ থেকে বাদ পড়ে তারাও ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ও কোভিড-১৯ ফোকাল পারসন ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার বলেন, শুধু প্রাপ্ত বয়স্করা নয়, আমাদের সন্তানদেরও সুরক্ষা প্রয়োজন। কোভিডকালীন এ সময়ে বর্তমান সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। তাই বিভিন্ শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে কোভিড ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আমাদের সকলকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সরকারের নির্দেশে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রত্যেক মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত ১৫ উপজেলার ১২-১৮ বছর বয়সী মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থীকে ফাইজারের ১ম ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। মহানগরে ৩২ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে ২য় ডোজ ভ্যাকসিনও প্রদান করা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন না পেয়ে থাকবেনা। এটা বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে করোনার ঝুঁকি অনেকটা কম। করোনা ও ওমিক্রন থেকে রক্ষা পেতে হলে শুধু শিক্ষার্থী নয়, পর্যায়ক্রমে সবাইকে কোভিড ভ্যাকসিনের আওতায় আসতে হবে। নিজে ভ্যাকসিন নিয়ে অন্যকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি মাস্ক পরিধানসহ সামজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। জমাসমাগম ঘটে এমন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে।