বান্দরবানের সোনালী ব্যাংকে সন্ত্রাসীদের হানা, ম্যানেজারকে অপহরণ

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল হানা দিয়ে অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে ব্যাংকের ম্যানেজার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ৬০-৭০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল এ ঘটনা ঘটায়। ঘটনার সময় ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী এবং কর্মচারীরা নামাজে ব্যস্ত ছিল। ঠিক এই সময়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংকে হানা দিয়ে এ ঘটনা ঘটায়।

রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবে কত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে এখনও তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর ১৪ টি অস্ত্র ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি তারা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। মারধর করা হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ সময় সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংকের ভোল্টটি ভাঙচুর করে। ব্যাংকের ঐ ভল্টটিতে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ছিল। ওই টাকা সন্ত্রাসীরা লুট করে নিয়েছে কিনা এ বিষয়ে সিআইডির একটি তদন্ত টিম তা পরীক্ষা করে দেখছে। এদিকে রুমা উপজেলায় এ ঘটনার পর সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোঃ সৈকত শাহীন সহ প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। উপজেলা কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে বান্দরবানের প্রতিটি ব্যাংক এবং এটিএম বুথেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তি চেয়ে রুমা উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেছে। অন্যদিকে রুমা উপজেলার সাথে বান্দরবান সদরের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য পাহাড়ে নতুন গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ এর তৎপরতা কমিয়ে আনতে গত ৫ই মার্চ শান্তি কমিটির সাথে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের মাত্র এক মাসের মাথায় এ সংগঠনটি ব্যাংকে হানা দিয়ে লুটপাট চালায়। সংগঠনটির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকে হামলার পর চলমান শান্তি আলোচনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় মনে করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাসের প্রথম দিকে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য ওই ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমা ছিল।

পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানিয়েছেন, একটি সন্ত্রাসী দল ব্যাংকে হামলা করে টাকা এবং অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। তবে কত টাকা লুট করা হয়েছে এবং কোন সন্ত্রাসী দল এ বিষয়ে তিনি এখনো বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় রুমা উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। এবং সেই সাথে ওই সময়ে নামাজে ব্যস্ত ছিল ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এবং কর্মচারীরা। ঠিক এই সময়ে উপজেলা সদরের ব্যাথেল পাড়া এলাকা থেকে ৬০-৭০ জনের সশস্ত্র একটি সন্ত্রাসী দল উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই এলাকায় যারা ছিল তাদেরকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেই সন্ত্রাসীরা। রুমা উপজেলা বাজার থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এবং সোনালী ব্যাংকটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটি নিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

স্থানীয়রা মনে করছেন, ঘটনাটি কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে এর আগে এই সংগঠনটি ব্যাংক ডাকাতি করবে বলে এরকম একটি কথা রটিয়ে পড়েছিল এলাকায়। এদিকে এ ঘটনার পর এলাকায় জনমনে আতঙ্ক উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ওই এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে রুমা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখনো খোঁজ মেলেনি সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের। তাকে উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে অভিযান জোরদার করেছে।