চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সেবা সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে এক সমন্বয় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি । সভায় মেয়র জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর সমস্যা নিরসনে সেবা সংস্থাগুলোর মতামত গ্রহণ করেন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেন।
সভায় মেয়র বলেন, আমি সব সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। তবে, এই তিন মাসে যদি আমরা রেজাল্ট পেতে চাই, জনগণকে যদি আপনারা স্বস্তিকর অবস্থায় রাখতে চান তাহলে এই তিন মাস এটা কন্টিনিয়াস প্রসেসে কাজগুলো করতে হবে। আপনাদেরকে যখন যে নির্দেশনা দি, জনগণের মতামত আপনাদের কাছে তুলে ধরি তা আপনাদের সম্পন্ন করতে হবে। আমি চলে আসলে কাজ কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। খাল-নালাগুলোকে কন্টিনিউয়াস প্রসেসে ক্লিন রাখতে হবে।
মেয়র আরো বলেন, চকবাজারের কিছু এলাকায় পানি উঠেছে খাল-নালা অপরিস্কার থাকার জন্য। হিজড়া খালের জন্যও জলাবদ্ধতা হয়েছে। স্লুইচ গেটগুলোকে ফাংশনাল করতে হবে। বিভিন্ন নালায় পিডিবির পোল থাকায় পানি দ্রুত নামেনা এগুলো সরাতে হবে। আমরা পুলিশকে চিঠি দিব জিইসি থেকে ২ নাম্বার গেটে মাদকসেবীরা গ্রীল, নাট, ডাস্টবিন ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আমি গতকাল সরেজমিনে সবগুলো জলাবদ্ধতা সৃষ্টির এলাকাগুলোয় ভিজিট করেছি। পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা স্ব-স্ব এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৌশলগত সমাধান নিশ্চিত করবেন। একটি হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপ খুলবেন যেটিতে সব সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন সেখানে সমস্যা হওয়ার সাথে সাথে জানাবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিবেন। খালগুলোর মুখ পরিস্কার করার বিষয়ে নৌবাহিনী এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে হবে। ইতোমধ্যে নৌবাহিনী আগ্রাবাদের বক্স কালভার্ট পরিস্কারে নৌবাহিনী কাজ করছে যা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কর্ণফুলীর ডাউন স্ট্রিমে ড্রেসিং করতে হবে যাতে দ্রুত পানি অপসারিত হয়। সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিরসন প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । প্রকল্পটি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বন্দরের চীফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মো. ওবায়দুর রহমান, আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছেন প্রজেক্ট নেওয়ার যেটা শুধু খালগুলোর মুখকে টার্গেট করে কাজ করবে। এটা আমাদের টেন্ডার হয়ে গেছে । দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালগুলোর মুখ ক্লিয়ার করা শুরু হবে।
মেয়রের জলাবদ্ধতা বিষয়ক উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানযোগ্য। প্রয়োজন সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। সিডিএ যদি স্লুইচ গেটগুলোকে ফুল ফাংশনাল করতে পারে তবে তা জলাবদ্ধতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন করে জলপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হবেনা।
আইইবি চট্টগ্রামের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার প্রবল বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে কিছু এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা গেছে। তবে আশার কথা হল আগে আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এরিয়াতে পানি চার পাঁচ দিন থাকতো। এখন আমি আমি দেখলাম যে ওই যে বক্স কালভারটা আপনারা পরিষ্কার করার পরে একটা বেনিফিট যেটা হয়েছে আগে দুইদিকের পানি কিন্তু ওই কমার্স কলেজের ওদিকের পানি আর কমার্স কমার্শিয়াল এরিয়ের পানি দুইটা একত্র হয়ে যেত।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী (অ. দা.) ফরহাদুল আলম, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দীন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক শওকত ইবনে সাহীদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী এ কে এম মামুনুল বাশরী, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদাউসসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দ ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তবৃন্দ।