চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে একটি মসজিদে জুমার খুতবা দেয়ার সময় খতিবকে মারধর করার অভিযোগ ওঠেছে এক ইউপি সদস্যসহ তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খতিব নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল (৩৩), বাড়বকুণ্ড নতুনপাড়া এলাকার মোঃ জহিরের ছেলে জাওয়াজ উদ্দিন সানিম (২৬), একই এলাকার মোঃ আলাউদ্দিনের ছেলে সিরাজ শাওন (২৮) ও মৃত সাবের আহম্মদের ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে বাড়বকুণ্ডের নতুনপাড়া এলাকার নূরমার দিঘী জামে মসজিদের খতিব নেছার উদ্দিন জুমার আলোচনা শেষ করে খুতবা দেয়ার আগ মুহুর্তে ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল খতিবের হাত থেকে স্পীকার কেড়ে নিয়ে হুজুরকে উদ্দেশ্য করে নানা বিষয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। এসময় খতিব নেছার উদ্দিন মাইকের সুইচ বন্ধ করে দেয় এবং তাকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এ অবস্থায় মসজিদের ভিতরে একটি পক্ষ খতিবের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে খতিব নেছার উদ্দিনকে মামলার আসামীরা কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে মারতে টেনে হিচড়ে মসজিদের বাইরে নিয়ে আসে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যার হুমকি দেয়। এসময় দু’য়েকজন মুসল্লী খতিবকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। পরে মসজিদের মুসল্লিরা জড়ো হয়ে খতিবকে রক্ষা করে পুনরায় মজসিদের ভেতরে নিয়ে যান এবং জুমার নামাজ পড়ানোর অনুরোধ করেন। শেষে খতিব জুমার নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব পালন করেন।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ওই মসজিদের খতিবের বাবা মাওলানা ইদ্রিস দীর্ঘ ২৯ বছর সেখানে ইমামতি করে আসছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মসজিদের মোতয়াল্লীর সিদ্ধান্তে তার ছেলে মাওলানা নেছার উদ্দিনকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তুু তাকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল, জাওয়াজ উদ্দিন সানিম, সিরাজ শাওন ও মোঃ আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন বিরোধীতা করে আসছেন। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর রাতে ও ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নেছার উদ্দিন মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে আসামীরা তাকে আক্রমণ করে। সেসময়ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এর আগে ইউপি সদস্য ও তার বড় ভাই খতিব নেছার উদ্দিনের ছোট ভাই রায়হান উদ্দিনকে পিটিয়ে জখম করে। ওই ঘটনায়ও আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মুসল্লী বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের দিন খতিবকে মারধর করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে কয়েকজন মুরুব্বিকেও মারধরের শিকার হন। তারা ইউপি সদস্য সোহেলের অনুসারী। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কবরস্থানের জায়গায় বালু স্তূপ করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। শুনেছি মাহফিলে দাওয়াত না দেওয়ায় তিনি হুজুরের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে এসব ঘটনা ঘটেছে।
নূরমার দীঘি জামে মসজিদের মোতয়াল্লী হাবিব শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ইউপি সদস্য সোহেল এর আগে আমাদের নামফলক ভেঙে দিয়েছে। আমি সেসময় জিডি করেছিলাম। কোন প্রতিকার পাইনি। তিনি সবসময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। হুজুরকে সরাতে ওঠে পড়ে লেগেছেন। শুক্রবার মসজিদের ভিতরেই মারধর করেছে বলে জেনেছি। কবরস্থান পরিস্কারের নামে বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। তাছাড়া কবরস্থান দখল করে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন৷ এসবকে পুঁজি করে তিনি এলাকায় জনসাধারণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী খতিব নেছার উদ্দিন বলেন, ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল দীর্ঘ দিন মসজিদের কবরস্থানে বালু স্তূপ করে ব্যবসা করে আসছেন। মসজিদের মোতয়াল্লী হাবিব শাহরিয়ার আহম্মেদ এসবের প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন মজসিদের মোতয়াল্লী স্টেটের নামফলক ভেঙে দেয় এবং আম, জাম, কাঁঠাল ও করাই গাছসহ মোট ৬০ টি গাছ কেটে নিয়ে যায়। যা আনুমানিক মূল্য ২ লক্ষ টাকা।
এসবের প্রতিবাদে আমি সোচ্চার হয়ে ওঠলে তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল বলেন, খতিবকে কেউ মারধর করেনি। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ওইসময়ে তাকে মসজিদের ভেতর থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি আমি বক্তব্য রাখতেই পারি। খতিব কাউকে না জানিয়ে বার্ষিক মাহফিল করেছেন। প্রতিবছরের একটি সম্মিলিত উদ্যোগ এলাকাবাসীকে না জানিয়ে করায় আমি প্রতিবাদ করেছি। কিন্তুু তিনি আমার বক্তব্য চলাকালে স্পীকার বন্ধ করে দেয়। মসজিদের কবরস্থানে বালুর ব্যবসা করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে আগে অনেকেই অনেক কিছু রাখত। এখন আমি বালু রাখি। মসজিদের ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ায় আমাকে বিতর্কিত করতে এসব বলা হচ্ছে। মামলার সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, খতিব নেছার উদ্দিন জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে পারেন না, তার আলোচনা শ্রুতিমধুর না। এজন্য তাকে নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ কাজ করছে।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী রওশন আরা বলেন, মজসিদের ভিতরে জনসম্মুখে খতিবকে মারধর করে আসামীরা শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি। তারা ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত হেনেছে। আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি ওসি ডিবিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।