সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি নিয়ে নানা বক্তব্য পাচ্ছি : স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আমরা সংসদীয় পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি এ দুইয়ের মধ্যে দোলাচল নিয়ে নানা বক্তব্য পাচ্ছি। মেম্বার, কাউন্সিলর ও সিভিল সোসাইটির বেশির ভাগ সদস্য সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে। অন্যদিকে চেয়ারম্যান ও মেয়ররা এটার বিরোধিতা করছেন।

আজ রোববার বিকেলে নগরীর পেনিনসুলা হোটেলে স্থানীয় চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের নিয়ে সরকার সংস্কার কমিশনের দিনব্যাপী মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, সংসদীয় পদ্ধতির দিকে জনমত সবচেয়ে বেশি। লিখিতভাবেও অনেক মতামত পাচ্ছি। আবার অসুবিধা কী আছে, সেটাও মানুষ উল্লেখ করেছে। খুব সাধারণ একটি কথা এসেছে, ভোট কেনাবেচা হবে। ভোটের মধ্যে টাকা খরচ যে আবার শুধু সংসদীয় পদ্ধতিতে হচ্ছে, তাও না। মেয়র হতে গেলে প্রতিটি ওয়ার্ডের সব জায়গায় টাকা খরচ করতে হয়। তাহলে এ খরচের বহর কমাতে হবে নির্বাচন থেকে। না হলে ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, নির্বাহী যে বডি, সেটা বুঝতে হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়র যিনি হবেন তিনি নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এটা একা করবেন না সেটা। মন্ত্রিপরিষদের মতো কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তিনি সেটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করবেন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষের মতামত, যেহেতু এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয় থাকবে না, তাই তাই এ সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক। এখানে অনেকেই এমন মতামত প্রকাশ করেছেন। আমরা অন্য জায়গাতেও এ মতামত পাচ্ছি। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিনি। আমরা আরও দেখি। রাজনৈতিক দল থেকেও আমরা মতামত আহ্বান করেছি। দেখি তারা কী মতামত দেন।’

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘আমরা এটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এটা করা যাবে না। কারণ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্ন না থাকে, তাহলে স্থানীয় নির্বাচনে সেটি আনা জটিল হবে। আমরা সবাই মিলে এ বিষয়ে আলোচনা করব। সব জায়গা থেকে একই মতামত পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটা ভোটারদের নির্ধারণ করতে হবে। আমার এখানে যারা দাঁড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিন্তু নেতৃত্ব যোগ্যতায় ঘাটতি আছে, সে ক্ষেত্রে কাকে নির্বাচন করব— এ ব্যাপারে আমাদের ভোটারদের অনেক সচেতন হতে হবে।’

নির্বাচনে ‘না ভোট’ বিধান যুক্ত হওয়ার সুপারিশ থাকবে কি না, এমন প্রশ্ন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘না ভোটের বিষয়টি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিষয়। যেহেতু আমি সেখানকার সদস্য, আমি বলতে পারি। অনেক মানুষ না ভোটের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আমাদের কমিশনও চিন্তা করছে, না ভোটও রাখা যায়। কারণ এটি একটি চেকপয়েন্ট হবে। আমাদের দেশে এর আগে ইতিহাস আছে, ১৫১ থেকে ১৫২ জন সংসদ সদস্য পদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। না ভোটের বিধান থাকলে এ রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জেতার সুযোগ চলে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে, যাদের কোনো প্রার্থীই পছন্দ না। তারা আর ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। না, আপনি ভোটকেন্দ্রে আসুন। আপনার জন্য একটি অপশন থাকল না ভোট দেওয়ার। না ভোটের বিধানটি নির্বাচন সংস্কার কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রেখেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুই-চার দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একটা সময় দলীয় প্রতীকের ব্যবহার ছিল না। পরে দলীয় প্রতীক যুক্ত হয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার তুলে নেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নও ঘুরেফিরে এসেছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন কেউই চাচ্ছে না। কিন্তু দলীয় প্রতীক না থাকলেই দলের প্রভাবমুক্ত হবে, এটা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। দলের প্রভাব থাকবেই। যারা নির্বাচন করে, তারা রাজনীতিও করে। কোনো অসুবিধা আমরা দেখছি না। একদল থেকে একাধিক প্রার্থী দাঁড়াবে।’

নির্বাচনি খরচ কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন আমাদের দেশে খুবই ব্যয়বহুল। এটা হচ্ছে এক প্রার্থীর জন্য, আর সরকারের জন্য। বিগত সরকারের আমলে উপজেলা, ইউনিয়ন নির্বাচনে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ১৯ লাখ লোক নিয়োগ করা হয়েছিল। ২২৫ দিন লেগেছে। এটা খুবই এক্সপেনসিভ, সময়ক্ষেপকারী নির্বাচন।’

‘এ ছাড়া একটি নির্বাচন দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। অনেক কাজ ব্যাহত হয়। সুতরাং আমরা যদি একে আইন বদল করে একসঙ্গে করতে পারি, খরচ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। সময় লাগবে মাত্র ৪০ দিন। আরও কম লাগতে পারে। একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আব্দুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।