ফেব্রুয়ারিতে নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ শুরু

নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর কাজ কখন চালু হবে তা নিয়ে জানতে চেয়েছিল একজন। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালুরঘাট নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে।’

চট্টগ্রামে আরও একটি রিফাইনারি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, ‘আমাদের একটা রিফাইনারি আছে। অনেক পুরনো। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা দ্বিতীয় রিফাইনারির উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা জানেন, দুর্বৃত্তায়নের কারণে নতুন রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ইস্টার্ন রিফাইনারির কাজটা আমরা সহসা হাতে নেব।’

বিদ্যুৎখাতে সুখবর আছে জানিয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, ‘বিদ্যুৎখাতে কিছু সুখবর আছে। একটা সুখবর হচ্ছে- সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল আইনের মাধ্যমে। ২০১০ সালে এই আইন করা হয়েছিল। এটি হলো দ্রুত লেনদেনের আইন। এটা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। শাহদিন মালেক এটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। হাইকোর্ট আইনটিকে সংবিধানবিরোধী বলেছেন। আপনারা জানেন আমাদের চুক্তিগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি। চাইলেই বা সহজেই বের হওয়া যায় না। এজন্য আমরা ধীরস্থির ভাবে এগুচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাসের সংকটের কারণে প্রতিবছর ৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস আমদানি হয়। এ বছরই আমরা ৫০টি কূপ খনন করবো। আগামী দুই বছরে আরও একশটি কূপ খনন করবো। জ্বালানি আমাদানি করাটা সহজ। সে কাজটা করা হয়নি। কিন্তু কূপ খনন করে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করার চেষ্টাটাও হয়নি। আমরা নবায়নযোগ্য একটি শক্তিতে বিনিয়োগ করতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নয়, ছাত্র-জনতার অনুরোধে দায়িত্ব নিয়েছে বলে সভায় জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নির্বাচিত সরকার নয়। এ সরকার কোনো ক্ষমতা গ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র ছাত্র-জনতার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণ করলে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তা রক্ষার্থে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে।’

দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন ব্যবসায়ী বা পেশিশক্তির কাছে দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকারের দায়বদ্ধতা আছে জুলাই অভ্যূত্থানে ১ হাজারের বেশি শহিদ, ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়ে যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, ও অগণিত ছাত্র-জনতার প্রতি। এ দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বাপেক্সের এক-একটি গাড়ির দাম পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আবার জ্বালানি খাতে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে যার বার্ষিক রাজস্ব আয়ের কথা ছিল ১৪শ কোটি টাকা।’

‘কিন্তু ছয় মাস পরে গিয়ে জানতে পারলাম মাত্র ৩৭ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে। এগুলো উন্নয়নের নামে অপচয় করা হয়েছে। আমি কর্মকর্তাদের সাথে বসেছি যাতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা অপচয় করা না হয়। কারণ অপচয় করার মত অবস্থা এখন আমাদের নেই।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব সাইফুল ইসলাম, পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক আহসান হাবিব পলাশ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান ও সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির প্রতিনিধি মেজর মাহমুদ প্রমুখ।