চট্টগ্রামের রাউজানে একদল মুখোশধারীর গুলিতে ১২ থেকে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিশপাড়া গ্রামের আসদ আলী মাতব্বরপাড়া মসজিদ এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- নিরামিশপাড়া গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (৫০), মো. মহিউদ্দিন (৩৮), জানে আলম (৪৪) ও তার ভাই মো. সাইফুদ্দিন (৩১), মো. লাভলু (২৮), নুরুদ্দিন (২৮) ও তার ভাই মো. মানিক (৩৬), মো. মাসুদ (৩৫), আলাউদ্দিন (৪০), মো. হুমায়ুন (৪৫) ও নুরুল আবসার (৫৫)।
আহতরা কেউ কেউ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের গায়ে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আহত জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে প্রবাস থেকে ফিরেছি। মহিউদ্দিন আর আমরা সবাই একই বাড়ির। তাঁকে মারধর করা হয়েছে শুনে আমরা যাই সেখানে। মোবাইলে রাজনৈতিক ম্যাসেজ দেওয়া নিয়ে মহিউদ্দিনকে মারধর করা হয়। কিন্তু সে এমন কিছু করেনি। আমরা কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. রিভু রাজ চক্রবর্তী বলেন, আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহত বাকি তিনজনের শরীরে গুলির চিহ্ন নেই। তবে জখমের দাগ রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল রাত ৯টার দিকে। স্থানীয় দোকানি মহিউদ্দিন সড়ক ধরে নোয়াপাড়া সদর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। সড়কটি অন্ধকার থাকায় তিনি হামলাকারীদের দেখেননি। তাঁরা মহিউদ্দিনের পথ রোধ করে মুঠোফোনে কাকে খুদে বার্তা দিয়েছেন, এমন প্রশ্ন করে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে তিনি আহত অবস্থায় পালিয়ে ঘরে চলে আসেন। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মুখোশধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে বাড়ির লোকজন আহত হয়েছেন, সেটি নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের পুরোনো বাড়ি নামে পরিচিত। তাঁর ছেলে কামাল উদ্দিনের ওপর হামলা করার জন্যই মুখোশধারীরা গিয়েছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে হামলাকারীরা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
থানা-পুলিশ বলছে, মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তিনি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। মামুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক নুরুল আলম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী গতকাল রাতে তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের ছেলে কামাল উদ্দিনকে আক্রমণ করতে যায়। এলাকাবাসী তাতে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।