শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে ফ্যাসিবাদির দোসরদের বাদ দিয়ে সকল দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সরকারের মত একই ধারণার মানুষগুলো যেন আবার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কারণ সকল দলের অংশগ্রহণে ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালিত হলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)-এর উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স হলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, এসোসিয়েশন, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও চিটাগাং চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
এ সময় সাকিব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, সাকিবের প্রতি মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে যেন কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না ঘটে, সে জন্য সাকিবকে আপাতত দেশে না আসার বিষয়ে বিসিবিকে পরামর্শ দিয়েছি। বিসিবি সে অনুযায়ী সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছে।
আইসিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা পুরো বিশ্ব জানে। ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা ছিল। এ কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর বহিঃপ্রকাশও আমরা দেখেছি।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘আইসিসিও বিষয়গুলো জানে। এই বিষয়ে কোনো অফিশিয়াল (আনুষ্ঠানিক) কিছু জানানো হয়নি। কিছু জানানো হলে সেটি বিসিবিকে জানাবে তারা। আইসিসি থেকে কিছু বলার আগে কিছু বলতে পারছি না।’
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আরো বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো লোক নেই। আবার আমরা কারো দ্বারা প্রভাবিত নই। বিগত সরকারের সময়ে দখল-অপদখলের কারণে বাণিজ্য সংগঠনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধান করে কার্যকর করার জন্য প্রশাসনকে সহায়তার আহবান জানান। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থ সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে উপদেষ্টা পরিষদম-লীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহের জন্য সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
বিশেষ অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে উত্থাপিত সমস্যাগুলো চিহ্নিতপূর্বক সমাধানে কাজ করা হবে। একই সাথে তিনি চট্টগ্রামের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে লিখিত আকারে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে বিএসটিআই’র উন্নত ল্যাব থাকার পরও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পণ্যের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখনও ঢাকায় যেতে হয়। ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিএসটিআই আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে সকল পরীক্ষা চট্টগ্রাম থেকে সম্পন্ন করবে।
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, সরকার আমাকে চট্টগ্রাম চেম্বারে একটি সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেছে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে সেই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে চাই।
অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, কাস্টমস কমিশনার মো. জাকির হোসেন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরোয়ার জামাল নিজাম, আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবিদা মোস্তফা, বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহবায়ক এসএম সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, প্রাইম মুভার এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম খান, চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা নুর উল্লাহ বাহার, নারী নেত্রী শাহানা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন ট্রেড এসোসিয়েশন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএসহ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।