৫ কোটি টাকা না পেয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ বেনজির-জিয়াউলের বিরুদ্ধে

পাঁচ কোটি টাকা না পেয়ে চাঞ্চল্যকর কোকেন মামলায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মকে ফাঁসানোর অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  অন্য আসামিরা হলেন, সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।এএসপি ফারুকী নিজের জন্য এক কোটি টাকা ওই ব্যবসায়ীর কাছে দাবি করেছিলেন বলে মামলা সূত্রে জানা গেছে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ‘কোকেন মামলার’ আসামি নুর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ নিবরাস। অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে বেনজির আহমেদ ঘটনার সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক ও জিয়াউল আহসান অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন। এএসপি মহিউদ্দিন ফারুকী চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় মামলাটি তদন্ত করেছিলেন।

মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী আব্দুস সাত্তার  বলেন, ‘বেনজির আহমেদ পাঁচ কোটি টাকা এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এক কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও একজন নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে কোকেন চোরাচালানের মতো একটি গুরুতর অপরাধের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আদালতের কাছে এর প্রতিকার ও বিচার চেয়েছি। আদালত দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাবো।

নয় বছর আগে ২০১৫ সালের ৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে বলিভিয়া থেকে আসা সূর্যমুখী তেলের চালানের দু’টি ড্রাম থেকে কোকেন জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ ঘটনায় ২৭ জুন নগরীর বন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের হয়। আসামি করা হয় আমদানি পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে।

মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতে আলাদাভাবে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। র‌্যাব ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল মাদক আইনে এবং ২০২০ সালের ২৯ জুন বিশেষ ক্ষমতা আইনে অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। উভয় অভিযোগপত্রে নুর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। উভয় মামলা এখনও বিচারাধীন আছে।

এ অবস্থায় আসামি নুর মোহাম্মদের ছেলে নিবরাসের দাখিল করা মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, কোকেন মামলায় জড়িত করার আগে র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে নুর মোহাম্মদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় বেনজিরের নির্দেশে নগরীর বন্দর থানায় দায়ের হওয়া কোকেন জব্দের মামলায় তাকে আসামি করা হয়।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন বন্দর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বদরুল মামুন। পরবর্তীতে তদন্তভার যায় সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের তৎকালীন সিনিয়র সহকারি কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কাছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আসামি নুর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন বেনজিরের ইন্ধন, মদদ ও নির্দেশে র‌্যাব-৭ এর এএসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে তদন্তভার দেয়া হয়। ফারুকীর ডাকে নুর মোহাম্মদ ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি নগরীর পতেঙ্গায় র‌্যাব কার্যালয়ে যান। এসময় ফারুকী তার কক্ষে বসে নুর মোহাম্মদের কাছে বেনজিরের জন্য পাঁচ কোটি ও নিজের জন্য এক কোটি টাকা দাবি করেন।

নিবরাসের অভিযোগ, ছয় কোটি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে তার বাবাকে কোকেন চালান জব্দের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেন এএসপি মহিউদ্দিন ফারুকী। ওই মামলায় একবছর জেল খেটে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই নুর মোহাম্মদ জামিনে বের হলে অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এএসপি মহিউদ্দিন ফারুকী তার মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করে ছয় কোটি টাকা দাবি করেন এবং না দিলে ক্রসফায়ারে হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেন।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে যে জাহাজে আসা পণ্যের চালান থেকে ‘কথিত’ কোকেন জব্দ করা হয়েছিল, সেই জাহাজটির দেশিয় প্রতিনিধি কসকো শিপিং লাইনসের মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। কসকো শিপিং লাইনস আমদানি-রফতানির নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজ দায়িত্বে জব্দ মালামাল বিদেশ থেকে তাদের জাহাজে নিয়ে আসে।

নুর মোহাম্মদের এতে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরও শুধুমাত্র ছয় কোটি টাকা না দেয়ায় তাকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে বেনজির ও জিয়াউলের ইন্ধন ও নির্দেশে এএসপি মহিউদ্দিন ফারুকী তাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।