চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মোহাম্মদ ওয়াসিম অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ওয়াসিম। তবে তার এই ফলাফল সে দেখল না। কারণ সে না ফেরার দেশে।
গত ১৬ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রামে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় ওয়াসিম। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। ওয়াসিম ছাড়া সেদিনের আন্দোলনে আরও দুইজন নিহত হয়েছিলেন।
আজ বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়— নিহত ওয়াসিম প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ওয়াসিমের সেই ফলাফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তাকে স্মরণ করছেন তার সহপাঠি ও বন্ধুরা।
জানা যায়, নিহত ওয়াসিম আকরামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ায়। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে ওয়াসিম ছিলেন দ্বিতীয়। ২০১৭ সালে কক্সবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়।
এদিকে, গত ১৮ আগস্ট নিহত ওয়াসিমের মা জোসনা আক্তার নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ ১০৮ জনকে আসামি করা হয়।
কক্সবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের বাজারপাড়া গ্রামের প্রবাসী শফিউল আলমের ৫ সন্তানের মধ্যে ওয়াসিম ছিলেন ২য়। তাঁকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল মা-বাবার। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। মধুর আচার-ব্যবহারের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন মেধাবী এই তরুণ আকরাম।
ওয়াসিম আকরামের চাচা মাওলানা জয়নাল ও এলাকাবাসী জানান, ছোট থেকেই ওয়াসিম ছিলো অত্যন্ত মেধাবী। অসাধারণ ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। ওয়াসিম স্থানীয় মেহেরনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভাল ফলাফল করে। পরে মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করেন। তারপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে এবং একই কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়ন করেন। বেঁচে থাকলে ওয়াসিম আকরাম জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করেন এলাকাবাসী।