নগরীর এক ফ্লাইওভারের নিচে এক যুবকের দুই হাত দুটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক দল যুবক ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটি গেয়ে রীতিমতো উল্লাস করতে করতে পেটাচ্ছে। গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর ) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি গত ১৩ আগস্ট রাতের। চট্টগ্রামে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন দুই নম্বর গেট আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচের ঘটনা। ঘটনার পর দিন ১৪ আগস্ট ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরে প্রবর্তক মোড় থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহত যুবকের স্ত্রী তার লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভূঁইয়াবাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকায় থাকতেন তিনি। চাকরি করতেন স্টেশন রোডে অবস্থিত ফলমন্ডির একটি দোকানে। পুলিশের ধারণা, বেঁধে মারধর করায় মৃত্যু হয়েছে শাহাদাতের।
পুলিশ জানায়, ১৪ আগস্ট শাহাদাতের লাশ উদ্ধারের পর তার বাবা হারুন পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়, ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ প্রবর্তক মোড় থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে শাহাদাত হোসেনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেইসবুকের মাধ্যমে শাহাদাতের মরদেহ বদনা শাহ মাজারের সামনে পড়ে থাকার দৃশ্য দেখতে পান শারমিন। পরে চমেক হাসপাতাল এসে স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন বলেন, ভিডিওটি নজরে আসার পর জানতে পারি মারধরের শিকার যুবক হচ্ছেন শাহাদাত হোসেন। তার স্ত্রীকে থানায় ডেকে পাঠাই। থানায় এলে ওই ভিডিও তাকে দেখানো হলে ভিডিও চিত্রে দেখা যাওয়া যুবকটি তার স্বামী বলে শনাক্ত করেন। দোষীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শাহাদাতের স্ত্রী সেটি দেখে নিশ্চিত করেন যে, মারধরের শিকার ব্যক্তিটিই তার স্বামী। তিনি বলেন, যারা শাহাদাতকে হত্যার সাথে জড়িত তাদের খুব দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনা খুবই কষ্টকর। আমরা খুব দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করব, ইনশাআল্লাহ।