স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পাহাড়ে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত টিম গঠন করা হবে। কোনো অবস্থায় আইনশৃখলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যারা আইনশৃখলা অবনতি ঘটাবে কোনো অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না, হাত ভেঙে দেওয়া হবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের প্রান্তিক সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর আগে হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটি আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফসহ তিন উপদেষ্টা।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেছেন, আমরা সবাই সম্প্রীতি চাই। বাইরে একটি অংশ আমাদের সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই সম্প্রীতি চায়। আশা করি, দেশে ও বিদেশে রাঙামাটি একটি সম্প্রীতির শহরে পরিচিতি পাবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
এর আগে রাঙামাটির সেনা রিজিয়নের প্রান্তিক সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিন উপদেষ্টা। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পুলিশের মহাপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম, রাঙামাটি রিজিয়নের ব্রিগেড কমান্ডার মো শওকত ওসমান, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা উষাতন তালুকদার, জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি, এনএসআই ডিজি আবু মোহাম্মদ সারোয়ার ফরিদ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো মোশারফ হোসেন খান প্রমুখ।
এদিকে রাঙামাটি শহরের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বহাল রাখা রয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট গণপরিবহণ, নৌযানসহ সব ধরনের যানচলাচল। শহরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন, লুটপাট ও বৌদ্ধ বিহার, দোকান ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে।
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় অনিক কুমার চাকমা নামে কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষাথীসহ চারজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক লোকজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়াও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর, বিভিন্ন স্থাপনা, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, যানবাহনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।