নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে: সালাউদ্দিন আহমেদ

নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রবর্তন করে। তিনি বলেন, আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।

বিশ্ব গনতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর আলমাস মোড়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত কেন্দ্র ঘোষিত গণতন্ত্রের শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।

বাংলাদেশে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার আর জায়গা হবে না উল্লেখ করে সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের তাঁবেদারি চলবে না। বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম শহিদ রংপুরের সাঈদ, দ্বিতীয় শহিদ চকরিয়া পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম। গণঅভ্যুত্থানে ৪৮৫ জন শহিদের মধ্যে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলেন তিনি।

বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, সতেরো বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবেনা। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা মাবোনদের জন্য কলঙ্ক। হাসিনার মত স্বৈরশাসক ইতিহাসেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আবুল খায়ের ভূইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিতদের শাসন ফিরিয়ে আনাই হবে রাষ্ট্রের বড় সংস্কার।

জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের পথে নতুন করে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রের অতি জরুরি কিছু সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জন প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও সরকার গঠন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। উন্নয়ন যেমন গণতন্ত্রের বিকল্প নয়, তেমনি সংস্কারও ভোটের বিকল্প নয়।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারেনি। সাম্প্রতিক পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা দায়ী। ছাত্র জনতার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী। বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা করা যায় না। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার এদেশের মাটিতে হবেই।

শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান সরকার হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে দূর করে একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। দুঃশাসনে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা আশা করবো, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিবে।

সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ই আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেলো, স্বাধীনতা কাকে বলে।

তিনি বলেন,  মানবাধিকার ছিল না। এক ব্যক্তির শাসন ছিল সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে আমাদেরকে সমুন্নত রাখতে হবে।

বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সদস্য সাচিং প্রু জেরী, জালাল উদ্দীন মজুমদার, মশিউর রহমান বিপ্লব, হুম্মাম কাদের চৌধুরী প্রমুখ।

সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড়, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে লালদিঘি পাড়ে এসে শেষ হয়।

শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাড়াও কক্সবাজার, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা থেকে বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যোগ দেন।