চট্টগ্রাম মহানগরীর ১১টি থানা এবং সিটি মেয়রসহ দুই আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন, দামপাড়া পুলিশ লাইন, হালিশহর জেলা পুলিশ লাইন এবং ২ নং গেট জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে দারুল ফজল মার্কেটে নগর এবং দোস্ত বিল্ডিংয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বিকেল ৩টা থেকে নগরের বিভিন্ন জায়গায় বিজয় ও আনন্দ মিছিল বের করে জনতা। মিছিল থেকে ক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও ভাঙচুর করে।
জানা গেছে, বহদ্দারহাটের মিছিল থেকে ক্ষুদ্ধ জনতা সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলা করে। সেখানে ভাঙচুর করা হয়। এরপর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মেয়র বাসায় ছিলেন না। তবে তার পরিবারের সদস্যরা বাসায় ছিলেন।
এদিকে কোতোয়ালীর পাথরঘাটায় রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাসায়ও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া মেয়র গলিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায়ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় আন্দরকিল্লায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বাসায়ও।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর বাসায় হামলার চেষ্টা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমি অহিংস রাজনীতি করি। তাই এলাকার লোকজন এসে তাদের বোঝানোর পর তারা চলে যায়। চসিকের ৯, ১০, ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাসায়ও হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসারুল হকের বাসায়ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
হালিশহরে ইয়েলো শপিংমলে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় জিনিসপত্র নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ লোকজন ভাঙচুর করে।
থানা থানায় আগুন ও হামলা : বিক্ষুদ্ধ জনতা ভাঙচুর ও হামলা করেছে নগরের ১১টি থানায়। এর মধ্যে পতেঙ্গা, পাহাড়তলী, কোতোয়ালী ও আকবর শাহ থানায় আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার বিষয়ে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, ক্ষুব্ধ লোকজনকে প্রতিরোধ করার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সরে গেছেন তারা।
জানা গেছে, ক্ষুদ্ধ জনতা কোতোয়ালী থানায় ভাঙচুর করে। সেখানে থাকা কয়েকটি গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। পরে থানায় এবং গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া পতেঙ্গা, পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানায় আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া চান্দগাঁও, হালিশহর, সদরঘাটসহ আরো ৬টি থানায় ভাঙচুর এর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বিকালে ৫টার দিকে নগরের লালদীঘির পাড়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার চেষ্টা করেন মানুষ। প্রধান ফটকের বাইরে হাজারো মানুষ অবস্থান নিয়ে কারাগারে হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় কারাগারের ভেতর থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন কারারক্ষীরা। রাত ৯টায়ও কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন হাজারো মানুষ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বিকেল ৫টা থেকেই কারাগারে হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দরকার। বাইরে অসংখ্য লোক অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ লাইনে হামলার চেষ্টা : মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন, দামপাড়া পুলিশ লাইন, হালিশহর জেলা পুলিশ লাইন এবং ২ নং গেট জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে।