এভাবে মায়ের কোল খালি হোক আমি চাই না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি স্বজন হারানোর ব্যথা কত কষ্টের। আর সেই ব্যথা বুকে নিয়েই ফিরে এসেছি এই দেশের মানুষের জন্য।
শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে আন্দোলনে আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে করে দেব এবং করে দিচ্ছি। যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা নেবে তার সরকার। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মত চলাফেরা করতে পারে। নিজেদের কাজ করতে পারে। আমাদের সাধ্যমতো আমরা করে দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আমার তো কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়েদের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া… নিজেরাই চাকরি করে লেখাপড়া করেছে। আমি কতটুকুইবা তাদের জন্য করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আজ অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান; সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখনই তাণ্ডব করে ঠিক যে জায়গাগুলো (প্রতিষ্ঠান) মানুষের সেবা করবে, সে জায়গাগুলোতে আঘাত করা হলো।
দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করতে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছিল। দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রেরই অংশ এটি। ‘দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। অপরাধটা কী করেছি? এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ আর কেউ যেন এই দেশে চালাতে না পারে, সেই জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। এভাবে আর কেউ যেন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সরকারপ্রধানের সঙ্গে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন। সরকার প্রধান একইসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন।