কোকেন পাচারে বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে

সোমবার শাহ আমানত বিমানবন্দরে কোকেনসহ আটক বাহামার নারী স্টাসিয়া শান্তে রোলি (৫৪) ব্রাজিলের সাও পাওলো বিমানবন্দর থেকে চালনটি গ্রহন করেন। মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য হিসেবে তিনি চালানটির বাহকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্টাসিয়া বাহামা থেকে ব্রাজিল হয়ে দুবাই পৌঁছে ফ্লাইট চেঞ্জ করেন। এরপর চট্টগ্রামে পৌঁছেন। চট্টগ্রামে পৌঁছার পর চালানটি নির্দিষ্ট রিসিভারের কাছে হস্তান্তরের পর আজ মঙ্গলবার আবার তার দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিং করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।

দেশি ও বিদেশি একটি মাদক চোরাচালান চক্র কোকেন পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ৮ কেজি কোকেনসহ ৬ বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। চট্টগ্রামের এই চালানের সঙ্গে ওই চক্রের যোগসুত্র রয়েছে । পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চলছে। কোকেনসহ আটক বিদেশি নাগরিককে মাদক ও চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্টাসিয়া জানিয়েছে, সে কিছুই জানেনা। তারপরও স্টাসিয়া ও গ্রেপ্তার দুই নাইজেরিয়ানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য বের করা যাবে। ধারণা করছি, বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এসব কোকেন অন্য কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে আর্ন্তজাতিক মাদক চক্র।

সোমবার (১৫ জুলাই) কোকেন বাহক স্টাসিয়া ছাড়া ও এ চক্রের সদস্য আরো দুই নাইজেরিয়ানকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বাদি হয়ে নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ব্রাজিল থেকে কোকেনের একটি চালান বাংলাদেশে পৌঁছানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে গত ১১ জুলাই তথ্য পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সেই চালান আটকের জন্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। তারা চালানটি আটকের জন্য ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজর রাখছিলেন। কিন্তু ১২ জুলাই জানতে পারেন, চালানের বাহক রুট পরিবর্তন করেছেন।  তিনি ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকার তিন সদস্যের টিম চট্টগ্রামে পৌঁছে। টিমের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা শাহ আমানত বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক নজর রাখছিলেন।

শনিবার স্টাসিয়া শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছেন। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো লাগেজ ছিল না। আমরা তাকে অনুসরণ করতে থাকি। তিনি আগ্রাবাদ হোটেলে ওঠেন। আমরা সেখানেও তাকে নজরদারিতে রাখি। প্রথমে স্টাসিয়া রোববার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। পরে তিনি আরও একদিন সময় বাড়িয়ে নেন। তিনদিন ধরে নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে অবস্থান করছিলেন স্টাসিয়া।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল, সোমবার লাগেজে করে কোকেনের চালানটি পৌঁছবে এবং রাতে হোটেল থেকে রিসিভার সেটি তার কাছ থেকে নিয়ে যাবে। সে অনুযায়ী, আমরা রিসিভারসহ কোকেনের চালান আটকের পরিকল্পনা করি। কিন্তু বিমানবন্দরে কোকেনের চালানসহ বাহামার নারীকে আটক করা হলে আমাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আমরা এ চক্রের মূল হোতাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উর্ধ্বতন কমকর্তারা ও এপিবিএন চট্টগ্রামে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।