দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় আবারও একটি বড় মরা কাতলা মাছ ভেসে উঠেছে। রোববার (৩০ জুন) দুপুরে হালদার রাউজান অংশের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের মাছটি ভাসতে দেখে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে হালদা নদীতে একটি বড় রুই ও চারটি বড় কাতলা ও ১টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকা থেকে দুটি কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ওজন ১০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৫৮ সেন্টিমিটার, অপরটির ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৯৮ সেন্টিমিটার। গত ২৬ জুন রাউজান উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার কয়েক দিন আগেও ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার দুপুর ১২টার দিকে ভাটার সময় নদীর রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে স্বেচ্ছাসেবক ও ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম একটি মরা মা কাতলা মাছ ভেসে যেতে দেখেন। পরে তিনি সেটি ডাঙায় তুলে আনেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদা গবেষণা কর্মীদের খবর দেন।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে মৎস্য কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। মাছটির মৃত্যুর কারণ এবং নদীদূষণের নানা তথ্য-উপাত্ত তাঁকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। এরপর তিনি বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিবেদন পাঠাবেন।
হঠাৎ করে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুতে হালদার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের হুমকির মুখে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, হালদা নদীতে প্রায় বিগত দুই বছর পরে কয়েকদিনের মধ্যে ৫টি ব্রুড মাছ এবং ১টি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়া ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর সবচেয়ে কম পরিমাণ মা মাছ ডিম ছেড়েছে যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। ইতোমধ্যে প্রজনন মৌসুমের ৬টি জো শেষ হওয়ার মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে মাছ ডিম ছাড়ার কোনো রেকর্ড নেই। হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের এত হতাশার মধ্যে পাঁচটি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু হালদা নদীর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকমাস ধরে শাখা খালগুলোর দূষণের খবর গণমাধ্যমে দেখা গেছে। এই ব্রুড মাছের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে শাখা খালগুলোর দূষণ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করি। হালদা নদী তথা বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ রক্ষার জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদঘাটনের জোর দাবি জানান এ হালদা বিশেষজ্ঞ।