ছয় মাসের মধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।
রোববার (৩০ জুন) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে আশা জাগানিয়া অগ্রগতি হয়েছে। ২৭ জুন ঢাকায় অর্থমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলারে (৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা) একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর রেলমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, জুলাইয়ে প্রকল্পটি একনেকে উঠবে। আমরা মনে করি, এ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে। দীর্ঘসময় পর হলেও লাখো মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান যে কালুরঘাট রেলসেতু, সেটি প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ও জরাজীর্ণ। আশির দশক থেকেই বারবার জোড়াতালি দিয়ে এ সেতুকে এখন পর্যন্ত ট্রেন ও যান চলাচলের জন্য আপাত উপযোগী করে রাখা হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রেখে যেভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা হয়, এটা অনেকটা সেরকমই। গত একবছর ধরে সংস্কারকাজের জন্য সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। বিকল্প উপায়ে ফেরি দিয়ে মানুষ পারাপার করতে গিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক প্রাণহানির খবর দেশের মানুষ জানতে পেরেছে। এছাড়া দশকের পর দশক ধরে কালুরঘাট সেতুতে আটকা পড়ে কত মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে মানুষ, কত প্রসূতির, কত সংকটাপন্ন রোগীর প্রাণ গেছে- সেকথা বলাই বাহুল্য, যা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি বোয়ালখালী-পটিয়ার মানুষের।’
তিনি বলেন, ‘অন্তত চার দশক আগে থেকে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটি নতুন সেতুর আকুতি জন্ম নিতে থাকে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে, প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে কালুরঘাট সেতুর বিষয়টি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে এলেও ২০১৪ সালের আগপর্যন্ত সেটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। ২০১৪ সালের শুরুতে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।’ এর মধ্য দিয়েই সেতুর দাবি প্রথম জনসম্মুখে আসে। মানুষ লুফে নেয় তাদের প্রাণের দাবি, সোচ্চার হয় জনতা।’
তিনি বলেন, ‘সেতুর দাবি সামনে আনার পর সরকারেরও বিষয়টির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। গত দশ বছরে কয়েক দফা অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা, নকশা প্রণয়ন এবং সরকারি পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মারফতে জেনে এসেছি। কিন্তু এরপরও বারবার অদৃশ্য কারণে সেতুর নির্মাণের বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম স্থবির ছিল। কোথাও না কোথাও অদৃশ্য সূতোর জালে আটকা পড়ছিল বারবার আমাদের প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি।’
তিনি বলেন, ‘এবার আমরা আশাবাদী। আমাদের মাননীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়েশা খানম, আমাদের সাংসদ আবদুছ ছালাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের ছাতা হয়ে আছেন। সম্প্রতি কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ সরকারের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এবার আমরা এতে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কালক্ষেপণ চাই না। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক নজরদারি আশা করছি।’
এ সময় সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তফা নঈম, সদস্য সচিব সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্ত ও সমন্বয়ক সাংবাদিক উত্তম সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন।