খুলে দেয়া হয়েছে কালুরঘাট সেতুর ওয়াকওয়ে। গেল শনিবার (২২ জুন) থেকে সেতুটির ওয়াকওয়ে খুলে দেওয়ার পর ট্রেনের পাশাপাশি মানুষ হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর হলেও হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষ অনেক খুশি।
স্থানীয়রা বলছেন, কালুরঘাট সেতুতে ওয়াকওয়ে চালু হওয়ায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। তবে, দ্রুত গাড়ি চলাচল শুরু হলে আমাদের আরো বেশি ভাল হয়। কারণ, সংস্কার শুরুর পর থেকে ফেরিতে চলাচল করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। তাই দ্রুত পরিবহন চলাচল জরুরি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বুয়েট প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে প্রাচীন কালুরঘাট সেতু। সংস্কারের প্রথম ধাপ শেষ করে গত ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল শুরু হলেও যানবাহন ও পথচারী চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে লেগে যায় অনেক সময়। সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের পথ থাকায় রেল ট্র্যাকের অভ্যন্তরে পানি জমে পাত ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে এবার বিদ্যমান পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ রাখা হয়েছে। এরপর ওই কংক্রিট ঢালাইয়ের ওপর পিচ দিয়ে সড়কপথ নির্মাণ করা হয়। এতে সড়ক ও রেলপথ উভয়ই আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও মজবুত হয়েছে ।
রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংস্কারের প্রথম ধাপ শেষ করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। যানবাহন চলাচল ও পথচারী চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে সময় লাগে দীর্ঘদিন। কালুরঘাট রেল সেতু যানবাহন ও পথচারী চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত। আগামী জুলাই–আগস্টে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহনও চলাচল করতে পারবে বলে জানা গেছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে বুয়েটের একদল গবেষক আরেকবার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলেন সেতুটি। বর্তমানে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সেতুটি দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচল (নতুন সেতু নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন ও যানবাহন চলাচলের জন্য) করতে পারার মতো নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুটির সংস্কার কাজ করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সেতুটিকে নতুনভাবে সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে আধুনিক উচ্চগতির ট্রেন চলাচল উপযোগী করে তোলার জন্য বুয়েটকে ৮ কোটি টাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ১ আগস্ট থেকে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। সেতুটি নতুন করে সংস্কারের জন্য গত বছরের ১৮ জুন রেলওয়ের সাথে ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফা পেছানো হয় সেতুটির সংস্কার কাজ। তবে সংস্কারের প্রথম ধাপ শেষ করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী (কক্সবাজার এক্সপ্রেস) ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ৫ নভেম্বর সংস্কাররত কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে ট্রায়াল রানের ট্রেন কঙবাজার যায়।
১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি সেতু বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। মূলত ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুটি সেই বছরের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সবরকম যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে সেতুটির বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। সেতুটিতে রয়েছে ২টি এবাটমেন্ট, ৬টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টিল পিলার ও ১৯টি স্প্যান। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার। কালুরঘাট সেতুটির বর্তমান বয়স ৯৪ বছর চলছে।