দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা ঘুষের অভিযোগ তদন্তে সীতাকুণ্ডের এসিল্যাণ্ড মোঃ আশরাফুল আলমসহ ৮ জনকে তলব করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল। নাহিদা আক্তার নামে এক এতিম শিক্ষার্থীর দায়ের করা লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার বেলা এগারোটায় রাজস্ব কার্যালয়ে তাদের সকলকে স্ব-শরীরে হাজির থাকতে বলা হয়। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিযোগকারী নাহিদার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা এর স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৬২১.২৬.০০১.২৩.৪২৮২ প্রেক্ষিতে নাহিদা আক্তার কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রামের পরিচালক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয় শুনানী আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার বেলা এগারোটায় নিন্মস্বাক্ষরকারীর অফিস কক্ষে ( কক্ষ নং-২৩৫, দ্বিতীয় তলা) গ্রহণ করা হবে। উক্ত শুনানীতে লিখিত বক্তব্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ (যদি থাকে) সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হলো। নোটিশটি সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল আলমসহ ৮ জনকে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যরা হলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে কানুনগো সুব্রত দেওয়ান, সার্ভেয়ার অহিদুর রহমান, কামরুল ইসলাম, সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম, প্রাক্তন অফিস সহকারী বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর গোপনীয় শাখার গোপনীয় সহকারী সাহেদুল ইসলাম, সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অস্থায়ী কর্মচারী কামরুল ইসলাম ও অভিযোগ দায়েরকারী নাহিদা আক্তার।
দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাহিদা আক্তার নামে একজন হতদরিদ্র, এতিম শিক্ষার্থী তার ০.২৫ শতক জমি নামজারির জন্য সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেন। কিন্তুু পদে পদে তিনি ঘুষ দাবির মুখে হয়রানির শিকার হন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, শুরুতে সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ওই অফিসের অস্থায়ী কর্মচারি কামরুল ইসলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ঘুষের কারণ প্রধান কর্মকর্তা শাহ আলমকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কাজ করি না আমরা, ঘুষ না দিলে নামজারি প্রস্তাব পাঠানো হবে না। ‘
ফলে বাধ্য নাহিদা আক্তার তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হন। কিন্তুু পরবর্তীতে ফাইলটি উপজেলা ভূমি অফিসে আসলে পুনরায় নাজির সাহেদুল ইসলাম নাহিদা আক্তারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তার দাবি মেটাতে ব্যর্থ হলে নাহিদা আক্তারকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। আজ নয় কাল করে করে কালক্ষেপণ করেন অফিস সহকারী সাহেদুল ইসলাম। নাহিদা তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, তিনি এসিল্যাণ্ডের সাথে সরাসরি দেখা করতে চাইলেও নাজির সাহেদুল ইসলাম তা করতে দেননি। পরে টাকা না দেয়ায় নাহিদার নামজারি আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী নামজারি আবেদনে মূল কাগজপত্র দাখিলের সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া নামাজারিটি খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে কারণ জানতে চাইলে নাহিদাকে জানানো হয় মূল দলিল প্রদর্শন করা হয়নি তাই খারিজ কর দেয়া হয়েছে। অভিযোগে নাহিদা জানান, এরপর এসিল্যাণ্ড মোঃ আশরাফুল আলমকে মুঠোফোনে হয়রানির বিষয়টি ও তার কর্মচারীদের ঘুষ দাবির অভিযোগটি জানালে এসিল্যাণ্ড জানান ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে তার নামজারির শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। যথারীতি ১২ সেপ্টেম্বর শুনানীতে অংশ নিলে এসিল্যাণ্ড তাদের মূল দলিল দেখেন। এসময় এসিল্যাণ্ডকে নাজির সাহেদের ঘুষ দাবির বিষয়টি জানালেও তিনি কর্ণপাত করেননি। উল্টো নানাভাবে তাকে অপদস্ত করেন এসিল্যাণ্ড। এবং ঘুষ দাবির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে নাহিদাকে ধমকান। পরে নামজারি আবেদনটি খারিজ হয়নি চলমান রয়েছে বলে যত দ্রুত সম্ভব নামজারি করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এরপরেও নামজারিটি সৃজন হয়নি। উপরন্তুু নাহিদাকে হয়রানির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তার উপর ক্ষুব্ধ হন এসিল্যাণ্ড। একপর্যায়ে তিনি নাহিদাকে বলেন, আপনি গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন আপনার নামজারি হবে না। হয়েছেও তাই। অদ্যাবদি আমার নামজারি হয়নি।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল আলম অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবী করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, আমি অভিযোগ করেছিলাম দুদকে। যে দপ্তরের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি সেই ভূমি অফিসের কর্তাব্যক্তি হাজির হতো নোটিশ দিয়েছেন। একপ্রকার অভিযুক্তদের ঘরেই চলবে শুনানী। এরপরও আমি ন্যায়বিচার আশা করছি।
এর আগে ২০২২ সালের ২৬ মে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিস থেকে নথি গায়েবের অভিযোগ তুলেন জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউআরজিসির রাস্ট্রদূত ও সিনেটর ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী। ওইসময় তিনি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ওই বছরের ১৬ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব শাকিলা রহমান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসের নানা দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।