চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৫ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় অটোরিক্সা চালক একরাম হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেন তার সহকর্মী ও সিএনজিচালক সমিতির নেতারা। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২,সীতাকুণ্ড পৌর সদরস্থ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের পাশে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত তা ছিল সম্পূর্ণ ক্লুলেস। অবশেষে সেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করল চট্টগ্রাম পিবিআই কর্মকর্তারা।
এই হত্যা মামলার ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সীতাকুণ্ড থানার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন ও সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি সিএনজি অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সীতাকুণ্ড পৌরসভার পেশকারপাড়ার মো. তাজুল ইসলামের ছেলে মো. জাহেদ হোসেন, পৌরসভার মধ্যম মাজেদপুরের মোহাম্মদ জাফরের ছেলে নূর আহাম্মদ, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ এলাকার মৃত আজগর আলীর ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ সাকিব ও বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের উত্তর মাহমুদাবাদ এলাকার মো. রুহুল আমিনের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিেশেনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার নামজুল হাসান পিপিএম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেপ্তরকৃতরা বলেন, তারা একরামকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে চাপ দিলে এমরান চাঁদা দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এমরানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এরপর সন্ধায় নূর আহাম্মদ সিএনজি অটোরিক্সা চাপা দিয়ে এমরানের গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি মারধর, বুকে, তলপেটে, পিঠে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। হাসপাতালে নেয়ার পথেই সে মারা যায়।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার আসামিদের আদালতে তোলা হলে আদালত সাকিব ও রানার ৩ দিন এবং নুর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
এজহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর একরাম হোসেন সিএনজি নিয়ে বের হলে আর ফিরে আসেনি। রাতে সীতাকুন্ড পৌরসভার ইপসা অফিসের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একরাম হোসেনের চালিত সিএনজি অটোরিক্সার পাশে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন গাড়িসহ তাকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করে। চমেকে নেওয়ার পথেই একরাম মারা যায়। এঘটনায় নিহতের ভাই ভাই নুরুল হুদা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী অফিসার পিবিআই চট্টগ্রামের এসআই মো. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান ‘পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ছায়া তদন্তে আসামিদের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাদের আটক শেষে মামলাটি সিআইডি অধিগ্রহণ করে। পরে আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে মহড়ার মাধ্যমে এলাকাবাসীকে একটি বার্তা দেওয়া হয়, খুনি যে বা যারাই হোক অপরাধ করে ছাড় পাওয়া যায় না। শত শত মানুষ এই মহড়া দেখায় অপরাধীরা আবার কোনো ঘটনা ঘটাতে ভয় পাবে।’