তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পীড়াপীড়িতে চট্টগ্রাম নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও যানজট নিরসনে উন্নত বিশ্বের আদলে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ ব্যাপারে সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে প্রকল্প তৈরি করে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভার কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে অনুরোধ জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে দিন দিন যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ ও দ্রুত এর বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ সচিবকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া, বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সড়ক উন্নয়নের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নে আরো ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়।
একনেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে অনেক বেশি পছন্দ করেন। তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জলজট নিরসন, স্যুয়ারেজ প্রকল্প, বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারসহ অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে ইতিপূর্বে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছেন, যার অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে ও হচ্ছে। চট্টগ্রামবাসী এর মধ্যে এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন। আজকের বৈঠকে মেট্রোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গভীর আন্তরিকতার প্রকাশ এবং নতুন বছরে চট্টগ্রামের জন্য নেত্রীর উপহার।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে সর্বাত্মকভাবে এটি আধুনিক ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সচেষ্ট রয়েছেন। চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের শহরে রূপান্তরে তিনি ইতিমধ্যে সব সেবা সংস্থাকে দিয়ে সুদূরপ্রসারী ও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন। এখন আমরা চট্টগ্রামবাসীর দায়িত্ব হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগানো। মেট্রোরেল ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে আর যানজট সমস্যা থাকবে না। ফলে বন্দর নগরী হিসেবে গাড়ির অত্যধিক চাপ নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে আর বাধা হতে পারবে না। ছয় হাজার কোটি টাকার জলজট নিরসন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরী দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। ওয়াসার চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরীর ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাষণে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদী দূষণ থেকে মুক্তি পাবে।’
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর একনেক সভার কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে অনুরোধ জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। তথ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যা এখন ৬৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এখনই যদি মেট্রোরেলের উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। তথ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল সার্ভিস চালুর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন উপস্থিত সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও। তিনিও প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের প্রস্তাবনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আগহে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল (এমআরটি) চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি)-এর কাজ ২০১৯ সালে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মেট্রোরেলের সাথে জড়িতদের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জন্য অবিলম্বে মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করতে নির্দেশ দেন।
একনেকের ওই সভায় কয়েকটি সড়কের প্রকল্প পাস হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংকালে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল (এমআরটি) চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছিলেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর একান্ত সচিব আবুল হাশেম জানান, ‘এ প্রকল্প চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ডকইয়ার্ড পর্যন্ত রাস্তাকে ৬০ ফুট করে সম্প্রসারণ, ৬০০ মিটার ওভারপাস, ৩৮ টি ফুটওভার ব্রিজ, ২২ টি কালভার্ট, ১৪ টি ব্রিজ, একটি ওভারপাস, ১০ টি রাউন্ড এবাউট এবং ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ। এ প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি রাস্তাও আর অনুন্নত থাকবে না। সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে ওঠবে চট্টগ্রাম।’