কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আবারও উচ্চাদালতে যাচ্ছে নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন

বার বার তাগাদা সত্ত্বেও কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশ অবমাননার অভিযোগ এনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার চাইবে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন।

সোমবার (১১ অক্টোবর) সকালে চাক্তাই খালের মোহনাস্থ কর্ণফুলীর তীরে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হাইকোর্টের আদেশ জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর “ধারা ৫ অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তনের বাঁধা নিষেধ। এই আইনের বিধান অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী কর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ অন্য কোন ভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না “ধারা-৮ শাস্তি ইত্যাদি।- ১) কোন ব্যক্তি এই আইনের বিধান লংঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবে।
বিএস ১নং খতিয়ানের ৮৬৫১ দাগের ১৪৭.১০ একর জায়গা কর্ণফুলী নদী হিসাবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছিলেন এবং মাছ বাজারকে বরাদ্দকৃত ১,৭৫,২৬৩ বর্গফুট বা ৪.০২৬৩ একর নদীর অংশে নতুন মাছ বাজার গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তা উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব। এতে আরও বলা হয়, মাছ বাজার ও ভেড়া মার্কেট উচ্ছেদ করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের ৪ নম্বর কলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তার তোয়াক্কা না করেই নতুন মাছ বাজার চলমান রেখেছে।

সংগঠনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, সিনিয়র সহ সভাপতি জাফর আহমেদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান দয়াল প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৫ বছরের চুক্তিনামা দিয়ে কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে। ২০১৯ সালের আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন মাছ বাজার উচ্ছেদ করা বাধ্যতামূলক ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাছ বাজার উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফকল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহআমানত ব্রিজের মাঝপিলার বরাবর ২০০০ স্কয়ার ফিট নদী নতুন করে লিজ দিয়েছে। যা সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন।

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীতে স্থাপিত মাছ বাজার ও বরফ কল এর চুক্তি বাতিল করতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবরে ১০ দিনের সময়সীমা দিয়ে আবেদন করেছে।
গতকাল ছিল উক্ত আবেদনের শেষ দিন। এই বিষয়ে আজ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জানায়নি।
একই তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিগত ০৩/১০/২০২১ তারিখে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে দশ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আবেদন করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এই বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি সিডিএ।

ফিরিঙ্গি বাজার মোড় থেকে মেরিনার্স পার্ক নতুন মাছ বাজার, ভেড়া মার্কেট থেকে বাকলিয়া চরের মোড় পর্যন্ত ৪৭ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বিগত ২০/১২/২০২০ তারিখে উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। উক্ত নোটিশ প্রদানের পর এক বছর দশ মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে না জেলা প্রশাসন। যা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের ১৫,১৬,১৭,১৮ নম্বর কলামে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ অনুযায়ী কর্ণফুলী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় মেট্টো এর পরিচালক উক্ত আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২০১৮ সালে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে বরফকল করার ছাড়পত্র দিয়েছে। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন এই ছাড়পত্র না দিতে আবেদন করেছিল। ২৪/৪/২০১৮ তারিখে উক্ত আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আমরা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশসহ সমস্ত তথ্য উপাত্ত উপাস্থাপন করি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্টো এর পরিচালক মহোদয় আদালতের আদেশ অমান্য করে ছাড়পত্র দিয়ে কর্ণফুলী দখল সুনিশ্চিত করেছেন।

চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় নদী ভরাট করে মাছ বাজার গড়ে উঠায় উজানের চেয়ে ভাটির মোহনা অংশ উচুঁ হয়ে গেছে বলে চুয়েট প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিতের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে জরিপে দেখা যায়। যে কারনে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি বাকলিয়া ও পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানা এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যা চট্টগ্রাম মহানগরীর এক তৃতীয়াংশের সমান এলাকা।

১৬ আগষ্ট ২০১৬ সালে মহামান্য হাইকোর্ট কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় প্রদান করেন পরবর্তীতে প্রতিপক্ষ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় ২০১৯ সালে এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ৯০ দিনের সময় দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম, চেয়ারম্যান বন্দর কর্তৃপক্ষ, মেয়র চসিক,চেয়ারম্যান সিডিএ, মহাপরিচালক,পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রামকে আদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট। এর ২০২০ সালের ৫-৯ ফেব্রুয়ারী পাঁচদিন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছর লালদিয়া চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

Comments (৪)
Add Comment