চট্টগ্রামে আয়োজিত ব্যবসায়ী সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রকৃত গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করা। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে বাধা হয়ে থাকা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ‘ব্রোকারিজ’ প্রথা সম্পূর্ণভাবে উপড়ে ফেলা হবে।
সোমবার দুপুরে নগরের হোটেল রেডিসন ব্লু’র মেজবান হলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ বিষয়ক “বাণিজ্য সংলাপ” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিক বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ যত কমবে, দুর্নীতি তত হ্রাস পাবে। ভবিষ্যতে এমন ব্যবস্থা চালু করা হবে যাতে আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করতে কাস্টমস কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে না হয়। উন্নত বিশ্বের মতো স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ও এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। তিনি ঘরে বসেই সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার নিশ্চয়তার কথাও জানান।
গ্রামীণ অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামের কামার, কুমার কিংবা শীতলপাটি শিল্পীদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে হবে। ডিজাইনার সাপোর্ট ও সহজ ঋণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার, এমনকি অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি করা হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং শহরমুখী জনস্রোত কমবে।
রেমিট্যান্স বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের রেমিট্যান্স আয় প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। সঠিক নীতি ও যুবসমাজকে আইটি খাতে দক্ষ করে তুলতে পারলে এ আয় ৫০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, দেশের ক্যাপিটাল মার্কেট বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। জিডিপির তুলনায় বাজারের আকার খুবই ছোট। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও তার আগে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজার সংস্কার ছাড়া ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, এসইসি ও বিটিআরসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। বিএনপি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে না; সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করাই দলের লক্ষ্য।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান বিদেশে থেকেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন এবং বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দলে পরিণত করেছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন পেছানো যাবে না। কেউ নিজের স্বার্থে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বাণিজ্য সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হকসহ উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা সরওয়ার জামান নিজাম, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, সংলাপে অংশ নেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম, পিএইচপি গ্রুপের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ সভাপতি সেলিম রহমান, প্যাসিফিক জিন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, আন্তঃ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কপিল উদ্দিন, বিজিএপিএমইএ’র সভাপতি মো. শহীদ উল্লাহ, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক আমীরুল হক, খাতুনগন্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর আবদুস সালাম, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তহিনুর আলম টিটু, মাদার স্টীল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল কাশেম, বিএনও লুব্রুকেন্টের পরিচালক সালাউদ্দিন ইউছুপ, সিএনজি ফিলিং স্টেশন সমিতির যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি জোনায়েদ আহমেদ রাহাত, ফার্নিচার প্রস্তুত কারক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান, রাঙ্গামাটি চেম্বারের সভাপতি এড. মামুনুর রশীদ, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক মানিকুর রহমান, বান্দরবান চেম্বারের সদস্য জসিম উদ্দিন প্রমুখ।